সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা

সুখী জীবনের মূলরহস্য- সুষম খাদ্য:

সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা

আমরা মানুষ হিসাবে সর্বদা সুখী জীবনের প্রত্যাশা করি। কিন্তু আমরা জানি না, সুখী জীবনের মূলে রয়েছে সুস্বাস্থ্য। প্রবাদ আছে, "A sound mind in a sound body." অর্থাৎ সুস্থ দেহে সুস্থ মনের বিকাশ।

শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রথম যে বিষয়টি আমাদের সামনে চলে আসে তা হল খাদ্য। আমরা প্রকৃতি জগতে দেখতে পাই, একটি উদীয়মান বৃক্ষও খাদ্য ও পানির অভাবে মৃত্যুবরণ করে। তাহলে মানুষের ক্ষেত্রেও তো এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।



এই খাদ্য নিয়েই যতসব ঝামেলা। পুষ্টিবিদগণ বলেন, সুষম খাদ্যের কথা। 


আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে মানুষ পাঠানোর পূর্বেই এখানে মানুষের বসবাসের উপযোগী খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার যাবতীয় সরঞ্জাম তৈরি করে রেখেছেন।অথচ আমরা কত জ্ঞান বিজ্ঞানের উচ্চতর শিখরে আরোহন করেও এখনো সঠিক খাদ্য নির্বাচন করা আমাদের দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না। 


পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, প্রকৃতির খাবার কে কোন প্রকার প্রক্রিয়াজাত না করে সরাসরি খেতে পারলে সেটির খাদ্যমান অক্ষুন্ন থাকে। তাদের মতে ৬৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর উপরে উচ্চ তাপমাত্রায় খাদ্য প্রস্তুত করলে খাদ্যের পুষ্টিগুণ পুড়ে গিয়ে একটি সুগন্ধ ছড়ায়, যেটিকে তারা বলে পুষ্টি পুড়া ঘ্রাণ। দীর্ঘ মেয়াদে এই পুষ্টি পুরা খাবার খেতে থাকলে মানবদেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলি পুষ্টির অভাবে দুর্বল হয়ে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যায়।



তাহলে বুঝা গেল, শুধু সুষম খাদ্য হলেই হবে না , সঠিক পদ্ধতিতে খাদ্য প্রস্তুত করাও জানতে হবে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে আমাদের খাবারের শতকরা ষাট ভাগ রান্না বিহীন কাঁচা খাবার হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ এই পৃথিবীর যে অঞ্চলের মানুষগুলো কাঁচা খাবার খায় তারা দীর্ঘজীবী হয়। চীন, জাপান এবং অন্যান্য দূরপ্রাচ্যের দেশগুলো।

এবার আসা যাক সুষম খাদ্য বলতে আমরা কি বুঝি। যদি আমাদের খাদ্য তালিকায় ছয় ধরণের খাদ্য উপাদান সঠিক মাত্রায় বিরাজমান থাকে, তাহলে সেটিকে আমরা সুষম খাদ্য বলে থাকি। এই ছয় ধরনের খাদ্য উপাদান গুলো হল:



১। শর্করা জাতীয় খাবার: যে খাবারগুলো আমাদের শরীরের তাপ উৎপন্ন করে ও শক্তি যোগায় সেগুলো হল শর্করা জাতীয় খাবার। যেমন ভাত,  আলু,  চিনি, গুড় ইত্যাদি।



২। আমিষ জাতীয় খাবার: যে খাবারগুলো আমাদের দেহকোষ গঠন করে এবং শারীরিক বৃদ্ধি ঘটায়, সেগুলো হচ্ছে আমিষ জাতীয় খাবার। যেমন মাছ, মাংস , ডিম,  বিভিন্ন প্রকারের ডাল ও বিভিন্ন রকম ডাল জাতীয় উদ্ভিদের বিচি ইত্যাদি।



৩। স্নেহ জাতীয় খাবার: যে খাবারগুলো আমাদের দেহে তাপ উৎপাদন করে ও দেহ কোষকে সচল রাখে, সেগুলো হচ্ছে স্নেহ জাতীয় খাবার । যেমন: তেল, ঘি ও অনেক নামিদামি কোম্পানির অলিভ অয়েল ইত্যাদি।



৪। ভিটামিন: যে সকল খাবার আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আমাদের শরীরের ফিটনেস বা সক্ষমতা বজায় রাখে, সেগুলি হচ্ছে ভিটামিন জাতীয় খাবার। শুধু শাকসবজি এবং ফলমূলের  মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। অবশ্য এক্ষেত্রে আমাদের সতর্কতাও প্রয়োজন রয়েছে। যেমন ধরুন আপনি বাজার থেকে শুধু সবুজ রঙের শাক-সবজি কিনে নিয়ে আসলেন যার মধ্যে রয়েছে শুধু ভিটামিন সি। তাহলে সব ধরনের ভিটামিন যদি পেতে হয় আমাদের সব ধরনের কালারফুল বা রঙিন শাকসবজি কিনে খেতে হবে। এগুলোকে বলে রংধনু খাবার। রঙিন শাকসবজি ফলমূল হচ্ছে এক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের আঁধার। প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরে যে সমস্ত ফ্রি রেডিকেল তৈরি হয়,  সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে এই এন্টিঅক্সিডেন্ট। যদি ফ্রি রেডিকেল নিয়ন্ত্রণ না থাকে তাহলে আমাদের শরীরে যেকোনো সময়ে সিস্ট-টিউমার হয়ে ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে।



৫। খনিজ লবণ (মিনারেল): খনিজ লবণ আমাদের প্রাত্যহিক খাবারের মধ্যেই রয়েছে। আমাদের খাবারে এটি যথেষ্ট পরিমাণ প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রয়োজন অনুপাতে খনিজ লবণ যদি না থাকে তাহলে আমাদের অনেক জটিলতা তৈরি হয় । যেমন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী,  শ্রবণ প্রতিবন্ধী, বোবা,  টেরা এ ধরনের শিশুর জন্ম খনিজ লবণের ঘাটতির কারণেই হয়ে থাকে।



৬। পানি: সুষম খাবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পানি। আমাদের দেহের শতকরা ৭০ ভাগই হলো পানি। আমাদের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে দেহ কোষের সাইটোপ্লাজম এর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে হচ্ছে এই পানি। প্রতিটি কোষের প্রাণ রস বা সাইটোপ্লাজমের মূল উপাদান হচ্ছে পানি। কোষের মধ্যে রস যদি না থাকে তাহলেতো কোষ মারা যাবে, অর্থাৎ আমরা মারা যাব।




সুজলা সুফলা , শষ্য শ্যামলা আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বছর ঘুরে আসে ছয়টি ঋতু। আর প্রত্যেক ঋতুতে এদেশে উৎপন্ন হয় বৈচিত্র্যময় সবজি।


চলুন দেখি এ সকল শাকসবজি ও ফলমূলের মধ্যে কি ধরনের খাদ্য উপাদান রয়েছে:



লাউ (Bottle gourd ) : দেখতেও সুন্দর , খাইতেও খুব সুস্বাদু। সবুজ রঙের এই সবজিটি গ্রামে গঞ্জে কৃষকের বাড়ির পাশে উৎপন্ন হয়ে থাকে। এর জন্য বাড়তি কোনো জমির প্রয়োজন হয়।

এই সবজিটির মধ্যে রয়েছে প্রচুর দ্রবণীয় ফাইবার যা খাবারকে সহজে হজম করে। এর ভিতরে বেশিরভাগ (প্রায় ৯৬% ) রয়েছে পানি। ফলে শরীরে শীতল ভাব বজায় থাকে এবং অস্থিরতা দূর করে। যাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া আছে,  প্রস্রাব হলুদ হয়ে যায় , বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে, লাউ খেলে তাদের এই সমস্যাগুলো দূর হয়ে যাবে।

যারা ওজন কমাতে চান তারা বেশি করে লাউ খেতে পারেন। কারণ এর মধ্যে রয়েছে নিম্ন মাত্রার ক্যালোরি এবং শূন্য কোলেস্টেরল। 

পাট শাক ( Jute Leaves ) : কৃষকের খেতে ফেলে দেওয়া অতিরিক্ত পাটের চারা গুলো এক সময় সুস্বাদু খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হতো কিন্তু এখন আর সেই পাটের চাষ এত চোখে পড়ে না। এখন বাণিজ্যিকভাবে পাট শাক উৎপাদন করা হয়। এর পুষ্টিগুণের কথা বলে শেষ করা যায় না।

ভিটামিন ও খনিজ লবণের আঁধার হল এই পাট শাক। এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্বলিত খাবার। এন্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেলকে নিয়ন্ত্রণ করার কারণে আমাদের দেহে সিষ্ট এবং টিউমার জন্ম লাভ করতে পারে না।তেতো পাট শাক মুখের রুচি বাড়ায় ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করে ।

মিষ্টি কুমড়া ( Pumpkin) : বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন সমৃদ্ধ অতি উপকারী একটি সবজির নাম মিষ্টি কুমড়া। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, এ,  ভিটামিন ই ,  আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম। দেহের জ্বালাপোড়া কমায়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। ভিটামিন এ এবং সি থাকার কারণে নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেলে উজ্জ্বল চুল এবং ত্বকের জন্য খুবই উপযুক্ত একটি সবজি। এতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকার কারণে ওজন কমাতে সহায়তা করে। এর বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন। এই বীজে থাকা  ট্রিপটোফ্যান নামক এমাইনো এসিড আমাদের রাতে ভালো ঘুম এর সহায়ক। এছাড়া মিষ্টি কুমড়া প্রোস্টেট ভালো রাখে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং দাঁত ও হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উচ্ছে বা করল্লা (Bitter Gourd): এটি একটি তিতা জাতীয় সবজি। এটি প্রচুর ভিটামিন সি ও বিটা কেরোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন ক্যালসিয়াম,  পটাশিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক এসিড, জিংক ও ফসফরাস।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি আদর্শ খাবার। করলার জুস করে অথবা সবজি হিসাবে এটি ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন। এছাড়া এটি এলার্জি , চোখের সমস্যা, দাঁত ও হাড়কে সুস্থ রাখা, রক্ত পরিষ্কার, চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য, চর্মরোগ, এলার্জিতেও এটি বিশেষভাবে কার্যকর।

ঝিঙ্গা (Ridge Gourd): শরীরের রক্ত ভালো রাখা ও লিভারের সুরক্ষায় ঝিঙ্গা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে জন্ডিস রোগের জন্য ঝিঙ্গার জুস খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি আলসার ও অম্ল নিরাময়ে খুবই উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের জন্য খুবই উপাদেয় সবজি।

চিচিঙ্গা (Kakri ): ভিটামিন ও খনিজ লবণের চমকার উৎস চিচিঙ্গা। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণ। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । এটি বিষেশভাবে হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।এর মধ্যে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ক্যন্সার প্রতিরোধক।

ধুন্দল (Sponge Gourd): এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি উপাদেয় পথ্য। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন এবং ভিটামিন বি। হৃদরোগ প্রতিরোধ,  হজম শক্তি বৃদ্ধি, গ্যাস্ট্রিক আলসার দূরীকরণ ও জন্ডিস রোগের বিশেষভাবে কার্যকর একটি সবজি।

শসা (Cucumber): দেহের বর্জ  নিরাময়ে এর চেয়ে ভালো সবজি আর নেই। দেহের পানি শূন্যতা দূরীকরণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ওজন হ্রাস করে, হজম শক্তি বাড়ায়, নখ চুল ও চোখের যত্নে খুবই উপকারী। ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের কারণে গেটে বাত নিয়ন্ত্রণ হয়।

ভুট্টা (Corn): প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাবার ভুট্টা। পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতার জন্য এর কোন তুলনা নাই। রুচি বর্ধক, হজমে সহায়ক, রক্তাল্পতা দূরীকরণ, বাজে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও দৃষ্টি শক্তি উন্নয়নে ভুট্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গাজর (Carrot Nantes): এটি চোখ ও ত্বকের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।  ডায়াবেটিস রোগীরা অনায়াসে খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় গাজরের রস পান করা সন্তান ও মায়েদের জন্য খুবই উপকারী।ইহা বদহজম,  দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া,  লিভারের রোগে আক্রান্ত রোগী,  ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। শ্বাসনালীর প্রদাহ ভালো করে ও দাঁতের সুরক্ষায় খুবই কার্যকর। গাজরের রঞ্জক পদার্থ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

ফুটি (MuskMelon): সবজির মতো জমিতে চাষ করা হয়। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে বলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। রক্তের শ্বেত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চোখের উপকার ,রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হৃদরোগে কার্যকর। এছাড়া মহিলাদের ঋতুচক্র কালীন পেট ব্যথা দূর করে।

লেটুস পাতা (Lettuce):  এটি আঁশযুক্ত খাবার। ফলে পরিপাকতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। কিডনি সমস্যায়ও উপকারী।ইহা শরীরের যে কোন অঙ্গে পানি জমে যাওয়া রোধ করে। এছাড়া লেটুস পাতা রক্ত পরিষ্কারক, ওজন কমাতে ও হজম প্রক্রিয়ায় খুব উপকারী। কোথাও ব্যথা পেলে, আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যথা ভালো হয় । গর্ভবতী মায়েরা লেটুস পাতা খেলে মা ও শিশু উভয়ের শরীরে রক্ত মাত্রা বাড়ে।

বিট (Beat Root): ডায়াবেটিসের উপকার করে। এতে পটাশিয়াম,  ম্যাগনেসিয়াম,  জিংক,  ক্লোরিন,  আয়রন,  সোডিয়াম ইত্যাদি খনিজ লবণ থাকার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের উপকার হয়। এনিমিয়া,  উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েডের সমস্যা দূর করে,  হজম শক্তি বাড়ায়,  লিভার সুস্থ রাখে,  রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে,  সহজে স্ট্রোক হয় না । পেটের বিভিন্ন রোগ,  জন্ডিস,  ডায়রিয়া,  কলেরা ইত্যাদি প্রতিরোধে খুব উপাদেয় একটি খাবার।

মুলা (Radish): বহু ভিটামিন সমৃদ্ধ মূলা। এটি এত বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে যে রোগ জীবাণু ধারে কাছেও আসতে পারে না। হৃদরোগ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি,  ইমিউনিটি উন্নতি ঘটে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ভিটামিনের ঘাটতি দূর হয়। শরীর থেকে টক্সিন দূর করে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

টমেটো (Tomato): টমেটো মানবদেহের বহু রোগ ব্যাধি দূরীকরণে একটি আবশ্যকীয় সবজি। রক্তশূন্যতা, হজম শক্তি উন্নয়ন, ত্বক পরিষ্কার ও সতেজ রাখে। ফ্রি রেডিকেল নিয়ন্ত্রণ করে,  উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। এর মধ্যে  ভিটামিন এ,  কে,  সি,  বি ওয়ান,  বি থ্রি , বি ফাইভ,  বি সিক্স,  বি সেভেন,  আয়রন, পটাশিয়াম,  ম্যাগনেসিয়াম,  ক্রোমিয়াম ইত্যাদি খনিজ পদার্থ বিরাজমান।

বেগুন (Brinjal): প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণের আধার হচ্ছে বেগুন। যাদের গেটে বাত এজমা ও এলার্জি  তাদের বেগুন না খাওয়াই ভালো । ক্যালসিয়াম,  ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ বেগুন দাঁত ও হাড়ের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী। দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা বাড়ায়, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে,  পাকস্থলী,  ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহৎতন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ডায়রিয়া পরবর্তী রোগীদের জিংকের ঘাটতি দূর করে। ডায়রিয়া চলাকালীন বেগুন খাওয়া নিষেধ।

পালং শাক(Spinach): প্রায় সকল খাদ্য উপাদান রয়েছে এই পালংশাকে। প্রায় সকল ধরনের ভিটামিন ও খনিজ লবণ এর মধ্যে থাকার কারণে, ওজন কমায়, কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, মাথাব্যথা আর্থ্রাইটিস ও রক্তশূন্যতায় বিশেষভাবে এই শাক কার্যকর। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কিডনির রোগের জন্য উপকারী। মহিলাদের মাসিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও চর্ম রোগ ও হৃদরোগেও এর কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয়।

লাল শাক (Red Amaranth): রক্তশূন্যতা রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া এটি কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে , দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়,  চুল ও ত্বকের জন্য বিশেষভাবে উপকারী এই লাল শাক।

ঢেঁড়স (Lady Finger): এন্টি ইনফ্লামেটরি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি সবজি হল ঢেঁড়স। এর মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম,  ম্যাঙ্গানিজ ও প্রচুর ভিটামিন সি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ফ্রি রেডিক্যাল নিয়ন্ত্রণে এর জুড়ি নেই। রক্তের বাজে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে, চুলের খুশকি দূর করে এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, বিষন্নতা,  দুর্বলতা ও অবসাদ দূর করে । এর মধ্যে বিটা ক্যারোটিন ও লিউটিন থাকার কারণে চোখের গ্লুকোমা ও ছানি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মটরশুঁটি( French Bean): এটি চমৎকার একটি প্রোটিনের উৎস। এছাড়া এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন,  ক্যালসিয়াম,  ফসফরাস,  ম্যাগনেসিয়াম,  ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম,  আয়রন , ফলিক এসিড,  বিটা ক্যারোটিন,  ভিটামিন এ,  ফসফরাস,  জিংক,  ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। কোষ্ঠকাঠিন্য,  ডায়াবেটিস প্রসূতি মায়েদের জন্য উপকারী। ত্বকের উজ্জ্বলতা ও চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়।

বরবটি (  Lobia): এটি একটি এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সবজি যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে, শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়,  ফলে দেহে চর্বি জাতীয় জিনিস জমা হইতে পারে না। এর মধ্যে ভিটামিন কে থাকার কারণে হাড়ের সন্ধি স্থলে ব্যথা নিরাময়ে সহায়ক।

তরমুজ ( Water Melon): প্রচুর ভিটামিন ও অ্যামাইনো এসিড সমৃদ্ধ সুস্বাদু এবং উপকারী একটি ফল যা সবজির মত জমিতে চাষ করা হয়। শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। হৃদরোগের জন্য আদর্শ খাবার। এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল বিধায় ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ও মেদ কমাতে সহায়তা করে। ঠান্ডা জনিত সমস্যায় তরমুজ ওষুধের মত কাজ করে। ডায়াবেটিস রোগীরা তরমুজ খেতে পারেন।


বন্ধুগণ সুস্বাস্থ্য প্রয়োজন , না সুঠাম দেহ প্রয়োজন? 

যদি ছয় ধরনের খাদ্য উপাদান আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত প্রবেশ করে তাহলে আমাদের কোষের যাবতীয় চাহিদা যদি পূরণ হয়ে যায়,  সেক্ষেত্রে আমাদের কোষগুলো যদি এক্টিভ থাকে তাহলে আমাদের শরীরও এক্টিভ বা কর্মক্ষম থাকবে। রোগ জীবাণু , রোগব্যাধি প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই সুষম খাদ্য। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা সম্ভব যদি আমরা সচেতন হই এবং নিয়মিত সুষম খাবার গ্রহণ করি।

খাদ্য বিষয়ক আরোও পড়তে পারেন:


https://www.smalifestyle.com/2022/02/Food-culture.html









Post a Comment

0 Comments