স্মার্টফোনের কারণে স্মৃতিশক্তি হ্রাস

বর্তমান সময়ে আমাদের হাতে থাকা স্মার্টফোনের কারণে স্মৃতিশক্তি এবং স্মার্টফোনের মধ্যকার সম্পর্কে জানা অনেক বেশি জরুরী। কারণ স্মার্টফোনের ব্যবহার ধিরে ধিরে মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয় কাজের তাগিদে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এই স্মার্টফোনের ব্যবহার এতটাই বেশি যে মহামারী করোনা ভাইরাসের থেকেও অনেক ভয়ানক আকারে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আমারা আমাদের স্মার্টফোনের উপর সকল কাজের স্মৃতিশক্তির রাখার জন্য নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি।

অতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহার আমাদের স্মৃতিশক্তি ধরে রাখা এবং নিত্য নতুন স্মৃতি গঠনের তৈরীতে অনেকটা বাঁধার সৃষ্টি করছে। শুধু তাই নয় স্মার্টফোনের কারণে আমাদের স্মৃতিশক্তিকে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে। এতে আমাদের ব্রেইন টিউমার এবং ব্রেইন ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরী হচ্ছে। অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে কিভাবে আমাদের স্মৃতিশক্তিকে হ্রাস করছে সেই বিষয়ে এই পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।





স্মার্টফোনের-কারণে-স্মৃতিশক্তি-হ্রাস

 

স্মার্টফোনের ক্ষতিকর প্রভাব

বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে থাকে হাতে থাকা স্মার্টফোনে ইন্টারনেটের পিছনে। এর ফলে আমরা দীর্ঘস্থায়ীভাবে মানষিক চাপ অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব এবং বিষন্নতায় ভুগছি। তবে আমরা অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সময় কাটিয়ে বাস্তবতা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিজেকে আনন্দ ও সান্তনা দেই। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে ফেসবুক মেসেঞ্জারের কলিংও আমাদের স্মৃতিশক্তির মানষিক চাপ তৈরী করে থাকি।
 
স্মার্টফোনের অনেক ছোট ছোট নোটিফিকেশন চেক করাও আমাদের স্মৃতিশক্তির অতিরিক্ত চাপ তৈরীর অন্যতম কারণ। আমাদের কাজের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কিছু বিষয়গুলো মাথায় ধরে না রাখিয়ে স্মার্টফোনে ধরে রাখার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। স্মার্টফোনে এসব স্মৃতিশক্তি ধরে রাখার অভ্যাস আমাদের স্মৃতিশক্তির কার্যপ্রনালী পরিবর্তন করে দিচ্ছে। এই বিষয়টিকে বলা হচ্ছে ডিজিটাল এ্যামনেশিয়া।







স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক

কেমব্রিজের স্নায়ু বিজ্ঞানী বারবারাহ সাহাকিয়া গত ২০১০ সালে একটি সঠিক পরিক্ষা করেছিলেন। তিনি ৩টি দলকে কয়েকটি বিষয়ের উপর পড়তে দেন এবং পড়া শুরু করার আগে একটি দলের সদস্যদেরকে তাদের মোবাইলে বার্তা পাঠানো হয়। আর একটি দলকে পরিক্ষা চলাকালিন সময় বার্তা পায় এবং ৩য় দল কোন প্রকার বার্তা পায়নি। তারপরে দেখা যায় যে সব পরিক্ষার্থী বার্তা পেয়েছে তারা কিছুক্ষণ আগে যা পড়েছে তা সঠিকভাবে মনে রাখতে পারেনী। এই থেকে বোঝা যায় স্মার্টফোনের ব্যবহারের কারণে আমরা আমাদের দৈনন্দিন সব দায়িত্বশীল কাজে সঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারছি না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গবেষণা পরিচালনার কাজ করা হচ্ছে। যার নাম Adolescent Brain Cognitive Development এই শব্দটিকে সংক্ষেপে বলা হয় ABCD Study এটি স্মৃতিশক্তির বিকাশ এবং শিশুদের স্বাস্থ্যে সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘ মেয়াদী গবেষণা। এই প্রকল্পটিতে প্রায় ১০ হাজার আমেরিকান শিশুদের প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগেই পরিক্ষা করা হয়েছে। এদিকে ABCD Study দেখা যায় স্মার্টফোনের ব্যবহার স্মৃতিশক্তিকে পরিবর্তন করেছে

এই পরিক্ষাটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল র‌্যাঙ্কিং হচ্ছে, যে সব শিশুরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সে সব শিশুদের স্মৃতিশক্তির কর্টিক্যাল অনেক পাতলা হয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানি ল্যারি রোজেন বলেন অল্প বয়সের কিছু শিশুরা বেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের একটি কর্টেক্স পাতলা ছিল। এছাড়াও যখন শিশুরা আরো বড় হওয়ার পরও এমনটা হওয়ার কথা ছিল। বয়স বেড়ে গেলে এবং বৃদ্ধ হয়ে গেলে সাধারণত স্মৃতিশক্তির কর্টিক্যাল পাতলা হয়ে যায়। স্মৃতিশক্তির কর্টিক্যাল পাতলা হয়ে গেলে পার্কিংসন এবং আলজেইমারের মত স্মৃতিবিভ্রম রোগ হতে পারে।









স্মার্টফোনের-কারণে-স্মৃতিশক্তি-হ্রাস


অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক   

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্মার্টফোনকে সম্ভাব্য মানব ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে ব্রেইন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। ফিনল্যান্ডের রেডিয়েশন এবং নিউ ক্লিয়ার সেফটি অথরিটি ২ বছর যাবৎ একটি গবেষণা চালিয়েছে। সেই গবেষণায় সঠিক পরিক্ষা অনুযায়ী দেখা যায় অতিরিক্ত সময় ধরে মোবাইল রেডিয়েশন ব্যবহারের ফলে ব্রেইনের মধ্যে থাকা টিস্যুকে ধ্বংস করে দেয়। শুধুমাত্র তাই নয় অধিক সময় ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে ব্রেইন টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা হতে পারে।

স্মার্টফোনের কারণে শিশুদের মাথায় বড়দের তুলনা প্রায় ১০ গুন ক্ষতিকর বিকিরণ ঘটে থাকে। স্মার্টফোনের তিব্র আলো আমাদের ঘুমের মারাত্মক ব্যাখাত ঘটায়। এই সব ইলেকট্রিক ডিভাইসের কৃত্রিম আলোর কারণে মেলাটোমিন হরমোন নিঃস্বরণ অনেক ব্যহত হয়। এই হরমোনই আমাদের শরীরকে ঘুম তৈরীর জন্য প্রস্তুত করে। সেই জন্য অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে এই তিব্র আলো আমাদের হরমোনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।








 
স্মার্টফোনের-কারণে-স্মৃতিশক্তি-হ্রাস

স্মার্টফোনের ব্যবহারে স্মৃতিশক্তি হ্রাস

বর্তমান স্মার্টফোনের ব্যবহার মানুষের স্মৃতিশক্তি ধরে রাখা দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে। কারণ আমরা বিভিন্ন বিষয় মনে রাখার জন্য স্মার্টফোনের ব্যবহারে অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। কানাডার ম্যাকগিল ইউনির্ভাসিটির অধ্যাপক অলিভার হার্ড বলেন আপনী যখন আপনার নিজের স্মৃতিশক্তি ব্যবহার করা বন্ধ করবেন তখন এটি পর্যায়ক্রমে আরো খারাপ হয়ে যাবে। যা আপনাকে আপনার বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসগুলোর উপর আরো অনেক বেশি নির্ভরশীল করে ফেলবে।

এছাড়াও অধ্যাপক হার্ড বলে জিপিএস এর দীর্ঘ ব্যবহার স্মৃতিশক্তির হিস্পো ক্যাম্পাসে গ্রেমেটার বা ধুসর এর ঘনত্ব অনেক কমিয়ে দিবে। স্মৃতিশক্তির এই ধুসর ঘনত্ব কমে যাওয়ার প্রভাবে বিষন্নতা এবং অন্যান্য মনোরোগ বৃদ্ধি পায়। যে সব ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবৎ জিপিএস ব্যবহার করছেন সেই সব ব্যক্তিদের জায়গা চেনা বা মনে রাখার ক্ষমতা অনেক দূর্বল হয়ে পড়ে। আপনী আপনার নিজের মনকে যত কম ব্যবহার করবেন আপনার স্মৃতিশক্তিকে জটিল পদ্ধতিগুলোর সিস্টেম বা এপিসোডিক মেমোরী টিক তত কম ব্যবহৃত হবে। এর ফলে ডিমেনসিয়া বা স্মৃতিশক্তি হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। 





  


স্মার্টফোন ব্যবহারের আসক্তি

স্মার্টফোনগুলো আসক্তি স্পস্টত ব্যবহারে জ্ঞানের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। কিন্তু এগুলো আমাদেরকে বর্তমান মহুর্ত থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। যেমন আজকের দিনটি অনেক সুন্দর কিন্তু আপনী তা সঠিকভাবে জানতেই পারলেন না কারণ আপনী হয়তো সমস্তদিন ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোসাল মিডিয়াতে স্ক্রল করেই চলেছেন। স্মৃতিগবেষক ওয়েন্ডি সুজকী বলেছেন আমাদের জীবনের ঘটনাগুলো যদি আমরা সঠিকভাবে মনে রাখতে না পারি, তাহলে তা আমাদের স্মৃতিশক্তিকে পুরোপুরী পরিবর্তন করে দেয়।

আমারা যখন কোন উৎসব অনুষ্ঠান বা যেকোন পার্কে বেড়াতে গেলে স্মার্টফোনে ছবি তুলতে এত পরিমানে ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে নিজেদের চোখ আর মন দিয়ে সেই ক্ষতিকর বিষয়গুলি সঠিকভাবে অনুভব করি না। পরবর্তীতে আমাদের ফোনে হয়তো ছবিগুলো থেকে যায় কিন্তু আমাদের মস্তিস্কে সেই স্মৃতিগুলো আর মনে থাকে না।







স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ লিন্ডাস্টোনের মতে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের দৃষ্টি ক্ষমতাকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তিনি আরো গবেষণা করেছেন মনোযোগহিনতা কিভাবে স্মৃতিশক্তিকে কঠিন প্রভাবিত করে। সাইক্লোজিস্ট প্রফেসর ল্যারিরোজেন বলেন স্মার্টফোনগুলো অবশ্যই আমাদের মনোযোগ কেড়ে নষ্ট করার জন্যই তৈরী করা হয়েছে।

তবে বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপ ডিজাইন করা হয়েছে যার মাধ্যমে আমাদের মনোযোগ কেড়ে নিয়ে তারা নিত্যদিন টাকা ইনকাম করতে পারে। এর ফলে আমাদের অজান্তেই এসব অ্যাপ আমাদেরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এছাড়াও ক্যাথরিন প্রাইজ বলেন স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের মস্তিস্ক একাধিক কাজ করতে পারে না। যখন আমরা একসাথে একাধিক কাজ তখন আসলে কাজগুলোর মধ্যে একটি কাজেও সঠিকভাবে মনোযোগ থাকে না।

আপনী যদি আপনার ফোনে সঠিকভাবে মনোযোগ দেন তবে আপনী অন্যকিছুতেই সঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারবেন না। এছাড়াও স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের স্মৃতিশক্তিকে ধীরে ধীরে অলস করে দেয়। সেই সাথে সামাজিক এবং মানষিক দক্ষতাগুলো নষ্ট করে।

 


সবশেষ একটি কথা বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন ছাড়া থাকাটাও অনেক মুশকিল ব্যাপার। স্মার্টফোনের কিছুটা ব্যবহার কমাতে হলে একটি কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে Tech Break বা প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকা। এই পদ্ধতে একটি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী এলার্ম সেট করে ফোন থেকে কিছু সময়ের জন্য বিরতি নিতে পারেন। এভাবে দৃষ্টিশক্তির ফোকাস বা মনোযোগ বৃদ্ধি করা যায়।

এছাড়াও দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে বিরত নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটানো উচিৎ।


এছাড়াও স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল তথ্য জানতে ভিজিট করতে পারেন https://www.sabuj240.com  

Post a Comment

1 Comments

  1. লেখাটি খুবই সুন্দর ও শিক্ষামূলক।

    ReplyDelete