প্রতিটি মানুষের ভিতরগত চাওয়া হল দুশ্চিন্তাহীন চাপমুক্ত জীবন। কিন্তু কিভাবে এই জীবন লাভ করা যায় এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন।
মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা সাধারনতঃ না পাওয়ার বেদনা বা কোন কিছু হারিয়ে যাওয়ার বেদনা থেকে তৈরী হয়।
আমাদের প্রত্যেকের মনোজগতে প্রতিনিয়ত দুইটি অনুভূতি বিরাজমান থাকে। একটি হল সুখানুভূতি আর অন্যটি হল দুখানুভূতি।
একজন দেখা যায় ডাল-ভাত খেয়ে মহা আনন্দে দিন কাটায় , আবার আরেকজন দেখা যায় পোলাও মাংস খেয়েও সুখী হতে পারে না।
তাহলে বুঝা গেল আমাদের মনে দুখানুভূতিও আসতে পারে। ফলে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা চলে আসতে পারে , এটি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
তাহলে চলুন দেখি এর থেকে মুক্তির উপায় কি কি হতে পারে।
১। মানসিক চাপের ভয়াবহ পরিনাম জানাঃ
আমরা জানি, আমাদের মনে যাকিছু অনুভূতি তৈরী হয় আমাদের ব্রেইন সেটা নিয়েই প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকে।
মহান সৃষ্টিকর্তা এমনভাবে ব্রেইনকে সেট করে দিয়েছেন, আমরা মনে মনে যা ভাবি, ব্রেইন তাই করে। এর জন্য মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, Brain is the obedient servant of our mind. সে এমনই বাধ্য চাকর যে , আমরা মনে মনে যা চিন্তা করি, সে সাথে সাথে সেটাই করা শুরু করে দেয় ।
মনোবিজ্ঞানীরা তার একটি গোপন রহস্য আবিষ্কার করেছেন। ঘটনার বাস্তবতা না থাকলেও সে এতই বোকা যে , সে সেটাই করতে থাকে।
উদাহরণ স্বরূপ আমি যদি আপনাদের সামনে বলি যে, গাছ থেকে একদম টসটসে পাকা তেতুল পেড়ে সাথে লবণ ও শুকনা মরিচ গুঁড়া ভালো করে পেস্ট করলে অত্যন্ত মজাদার একটি চাটনি তৈরি হবে। দেখুন এই কথাটি বলার সাথে সাথে আমাদের মুখে জল চলে এসেছে।
সে এতই বোকা যে মুখে তেঁতুল দেন বা না দেন, মনে মনে ভেবেছেন তেতুল , সে সাথে সাথে নির্দিষ্ট গ্ল্যান্ড থেকে এনজাইম ছেড়ে দিয়েছে।
তাহলে বুঝতে পেরেছেন আমরা মনে মনে যা ভাবি ব্রেইন সেটাই করে ফেলে। কি এক সর্বনাশা ব্যাপার । যদি আপনি মনে মনে দুঃখের অনুভূতি লালন করেন, আপনার ব্রেইন আপনাকে একদম শেষ করে দিবে।
আর যদি সুখের অনুভূতি লালন করেন তাহলে সে আপনাকে একেবারে সুখের জগতে নিয়ে যাবে।
২। যা হারিয়ে যায় সেটাকে ভুলে যাওয়াঃ
এই ভুলে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু তাৎক্ষণিক ব্যাবস্থা নিতে পারলে কাজ হতে পারে।
প্রেমিকা হারিয়ে গেছে ? খুব দ্রুত আরেকটি নতুন সম্পর্কে নিজেকে জড়িয়ে নিতে হবে।
এরকম হাজারো হারিয়ে যাওয়ার একটাই ফর্মূলা হল নতুন কিছু দিয়ে রিপ্লেস করা। এনড্রয়েড সেট ছিনতাই হয়ে গেছে ? দ্রুত একটি সেট কিনে ফেলতে হবে।
৩। ক্ষমা করে দেওয়াঃ
এক লেখকের বাবা ছোট বেলায় তার মাকে সহ ফেলে রেখে চলে যায়। সে কোন অবস্থায় তার বাবাকে ক্ষমা করতে পারছিলো না। সে প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে বড় হচ্ছিল। তার খাওয়-দাওয়া , পড়ালেখা কেনকিছুতেই মনোযোগ ছিল না। একটাই চিন্তা , বড় হয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞাস কেরবে সে কিভাবে তাকে ত্যাগ করতে পারল।
বড় হয়ে জানতে পারল , তার বাবা ঐ দেশের অন্য প্রদেশে থাকে। তখন সে ঐ প্রদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। যাত্রার পূর্বেই জানতে পারল তার বাবা মারা গেছে। তখন সে জিদ ধরল, বাবার কবরে থুথু মেরে আসবে।
নির্ধারিত দিনে সে ঐ প্রদেশে তার বাবার কবরের পাশে গিয়ে দেখে, কবরগাত্রে লেখা ছিল, Forgiveness is the fragrance of life. অর্থাৎ ক্ষমাই জীবনের সুঘ্রাণ।কথাটি পাঠ করার সাথে সাথে তার মনে ক্ষমা তৈরী হল, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি বের হল। মনে মনে ভাবল বাবা এভাবে চলে গেল অথচ দেখতেও পারলাম না বাবা কেমন ছিল। আরও অনেক কিছু। এই লোকটি যেদিন তার বাবাকে ক্ষমা করে দিল, সেদিন থেকে সে মানসিক চাপমুক্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে সে বিখ্যাত লেখক হয়ে যায়।
৪। ছোটখাটো বিষয় পাত্তা না দেওয়াঃ
ধরুন কোন টিনেজ মেয়ের হাত থেকে ডিম পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছে। সকাল থেকে সারাদিন নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে একমাত্র চিন্তা কেন এমনটি হল ? আমার সাথেই কেবল এগুলা হয়। এভাবে হাত থেকে পড়ে গিয়ে থালা বাটি গ্লাস ইত্যাদি ভেঙ্গে যাওয়া আরও কত কি।
এধরনের চাপমুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজন বন্ধু-বান্ধব থেকে তথ্য নেওয়া , আর কারো এমন হয় কিনা । তথ্য নিলে জানা যাবে যে, সবার সাথেই এমনটি হয়। কেউ হোচট খেয়ে পা ভেঙ্গেছিল, কারো নখ উল্টে গিয়েছিল ইত্যাদি আরোও কত কি ।অতএব চাপমুক্ত হওয়ার জন্য আজকেই মনস্থির করতে হবে এবং সবকিছু ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নতুন জীবন শুরু হরতে হবে।
৫। আশাবাদী মনোভাব তৈরী করাঃ
আশাবাদী লোকেরা যেহেতু সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করেন, তাদের জীবন হাসিখুশি আনন্দময়। কারণ তারা তাদের সফলতার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত থাকে। তাদের কোন টেনশন থাকে না। তাদের মধ্যে থাকে না কোন হারানোর বেদনা বা না পাওয়ার বেদনা। তারা সর্বদা যে কোন ঘটনা মেনে নেওয়ার জন্য তৈরি থাকেন।
আশাবাদী মনোভাব
0 Comments