সুখ কাকে বলে ?

সুখ কাকে বলে ?


 সুখের সংজ্ঞা

সবাই সুখী হতে চায় । সুখের সংজ্ঞা যদি জানতে চাওয়া হয় তাহলে সেটি একটু ভিন্নভাবে বলতে হয় । সাধারণ অর্থে সুখ বলতে সেটাই বুঝায় যেটাকে আমরা বলি মনের সুখ।



দৃশ্যপট-১:

আপনার মনে একটি কমলা খাওয়ার ইচ্ছা জাগলো। পকেটে যথেষ্ট টাকা আছে, আপনি কমলা কিনে খেয়ে ফেললেন। এতে আপনার মনে সুখের অনুভূতি তৈরি হল। অতএব আপনি সুখী।



দৃশ্যপট-২

আপনার মনে একটি কমলা খাওয়ার ইচ্ছা জাগলো। পকেটে টাকা নাই। কমলা কেনা হলো না। খাওয়াও হলোনা। মনে দুঃখের অনুভূতি তৈরি হলো। অতএব আপনি অসুখী।


তাহলে বোঝা গেল, পকেটে যদি টাকা না থাকে তাহলে কিন্তু সুখী হওয়া কঠিন। সে আফসোস করছে হায়রে, যদি টাকা থাকতো তাহলে কমলা কিনে খেতে পারতাম। এখানে টাকার অভাবে সুখ নাই বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে।




দৃশ্যপট-৩


একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী তার পরিবারকে বলল আজ তোমাদেরকে নিয়ে বাহিরে লাঞ্চ করব। পরিবারের সবাই তৈরি হয়ে বসে ছিল। 


কিন্তু ১টা থেকে ওনার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেল। বিকাল ৫ টায় ফোন দিয়ে বলল ,আমি দুঃখিত একটি ইমার্জেন্সি মিটিং ছিল। হঠাৎ করে বায়ারদের সাথে একটা মিটিং পড়ে গেল। অন্যদিন হবে। সময়ের অভাবে পরিবার নিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ করতে না পারায়, লোকটির মনে দুঃখের অনুভূতি তৈরি হয়েছে। অতএব তিনি অসুখী।


তাহলে এই ব্যক্তির কিসের অভাব? সে আফসোস করছে, হায়রে,  যদি সময় থাকতো তাহলে পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে লাঞ্চ করতে পারতাম। এখানে কিন্তু টাকা নয়, বরং সময়ের অভাবেই সুখ নাই বলে মনে হচ্ছে।




তাহলে বুঝা গেল সুখের পিছনে রয়েছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি হলো টাকা আরেকটি হচ্ছে সময়।


এছাড়া মনোবিজ্ঞানীদের ভাষায় , যার ঘরে রয়েছে প্রিয়তমা স্ত্রী , তিনি সুখী মানুষ। হয়তোবা লোকটি জীবনে তত সফল হতে পারেনি। কায় ক্লেশে জীবন যাপন করে কিন্তু উনার স্ত্রী নৈতিকতা সম্পন্ন আদর্শ একজন গৃহিণী। কষ্টের দিন যাপন করলেও, ঘরে আসলে স্ত্রীর মমতার পরশে তার হৃদয়ে গভীর শুকানুভূতি তৈরি হয়।


অন্যদিকে অনেক সফল ব্যক্তির জীবনেও দেখা যায় চরম দুর্ভোগ। স্ত্রী স্বামীকে বিশ্বাস করে না। আবার স্বামীও স্ত্রী কে বিশ্বাস করে না। ক্লান্ত দেহে বাসায় ফিরে হয়তোবা খাবারটাও নিজে তুলে খেতে হয় ।একটি মমতাময়ী কথাও তার ভাগ্যে জোটে না। অনেক প্রভাব প্রতিপত্তি জাঁকজমকপূর্ণ জীবন থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের মানুষের হদয়ে কোন প্রকার সুখের অনুভূতি তৈরি হয় না ।


এখানে সুখী মানুষের গল্পটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


এক মোড়লের এক গ্রাম্য মোড়লের হাড় মড় মড় রোগ হয়েছিল। কবিরাজ বলেছিল সুখী মানুষের জামা পরিয়ে 

 দিলেই মোড়লের হাড় মড় মড় রোগ ভালো হয়ে যাবে। 


এই কথা শুনে মোড়লের শ্যালক সুখী মানুষের জামার খোঁজে বেরিয়ে গেল। কিন্তু পুরো তল্লাটে জনে জনে জিজ্ঞাসা করেও সে কোন সুখী মানুষ খুঁজে পেল না।


অবশেষে নদীর ধারে একটি কুঁড়েঘর দেখতে পেল। সেখানে বসবাস করত এক কাঠুরিয়া। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো সে সুখী কিনা, উত্তরে কাঠুরিয়া বলেছিল যে সে মহা সুখী। সে বলেছিল যে , আমি জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করি , আমার পরিবারের জন্য খাদ্য সামগ্রী কিনে নিয়ে আসি,  পাশেই নদী আছে,  নদী থেকে মাছ ধরি,  নদীতে গোসল করি,  বাগানের ফল মূল সংগ্রহ করে খাই,  আমার চেয়ে সুখী মানুষ কে আছে বলুন?


এবার মোড়লের শ্যালক লোকটিকে বলল যে,  ভাই আপনার জামাটা যদি একটু দিতেন,  তাহলে আমার দুলাভাইয়ের হাড়  মড় মড় রোগ ভালো হয়ে যেত। কেননা কবিরাজ বলেছিল সুখী মানুষের জামা পরিয়ে দিলেই সে ভালো হয়ে যাবে।




উত্তরে কাঠুরিয়া বলেছিল তার কোন জামা নেই।


এজন্যই সমাজে দেখা যায় কেউ ডাল ভাত খেয়েও মহা সুখী, আবার কেউ অট্টালিকায় থেকে পোলাও মাংস খেয়েও সুখী জীবন লাভ করতে ব্যর্থ হয়।


আরোও পড়তে পারেন:


একটি "সুন্দর জীবন" বলতে আপনি কী বোঝেন?


Post a Comment

0 Comments