বাংলা প্রবাদ আছে, বড় যদি হতে চাও ছোট হয় তবে। ধনী হওয়ার জন্য আসলে ছোট থেকেই শুরু করতে হয়। আপনি কতটুকু ধনী হতে চান সেটা আগে নির্ধারণ করতে হবে।
মাসে আয় করতে চান কোটি টাকা। অথচ ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করা শুরু করলেন। লেবুর চারা লাগিয়ে কোনদিন কি আমরা বট গাছের আশা করতে পারি?
আমরা যারা চাকরি , ছোট খাট ব্যবসা, অথবা স্বল্প আয়ের সাথে যুক্ত আছি, তাদের ভবিষ্যৎ কি? ফ্লাট গাড়ি এ ধরনের স্বপ্ন পূরণ কি সম্ভব?
গল্পের বুড়িমা:
হঠাৎ দেশে বন্যা হয়ে সব চলে যাচ্ছিলো। উদ্ধার কর্মীরা বুড়ি মাকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য এসেছিল। বুড়ি মা বলেছিল আমাকে আমার আল্লাহই বাঁচাবে।
যখন বুড়িমার ঘর ডুবে গেল, উদ্ধার কর্মীরা বুড়িমার জন্য নৌকা নিয়ে এসেছিল। সেবারেও তিনি বলেছিলেন , আমাকে আমার আল্লাহই বাঁচাবে।
বুড়িমা তখন ঘরের চালের উপর আশ্রয় নিয়েছিল। অবস্থা যখন বেশি খারাপ হয়ে গেল , উদ্ধার কর্মীরা বুড়ি মারার জন্য হেলিকপ্টার নিয়ে এসেছিল। তখনো বুড়িমা বলেছিল, আমাকে আমার আল্লাহই বাঁচাবে।
শেষ পর্যন্ত বুড়িমা পানিতে ডুবেই মারা গেল।
মৃত্যুর পর বুড়িমা আল্লাহকে বলল, হে আল্লাহ তোমার উপর আমি কত আশা করে বসে ছিলাম। তুমি আমাকে বাঁচালে না। আল্লাহ বলেন তোমার জন্য উদ্ধার কর্মী পাঠালাম, নৌকা দিয়ে পাঠালাম, শেষ পর্যন্ত হেলিকপ্টার পাঠালাম। তুমি তো কোন সুযোগই গ্রহণ করো নাই। যা হবার তাই হয়েছে।
গল্পেটি কাল্পনিক হলেও শিক্ষা আছে:
বন্ধুরা প্রতিটি মানুষের জীবনেই এরকম সুযোগ আসে। কিন্তু অনেকেই সেই সুযোগগুলো উপলব্ধি করতে পারে না। ফলে তারা দরিদ্রই থেকে যায়।
KFC এর প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল স্যান্ডার্স ৬৩ বছর বয়সে জীবনের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। মরার আগে জীবনে কি কি কাজ করেছেন এবং ব্যর্থ হয়েছেন সেগুলো লিখতে ছিলেন। লেখার এক পর্যায়ে ছিল তিনি ভালো রান্না করতে পারতেন। হঠাৎ করে তার মাথায় চিন্তা আসলো আমি যেহেতু ভাল রান্না করতে পারি তাহলে কিছু রান্না করে দেখি জনগণ খায় কিনা।
তখন তিনি পরীক্ষামূলকভাবে একটু ব্যতিক্রম করে চিকেন ফ্রাই করে প্রতিবেশীদেরকে খাওয়ানো শুরু করলেন। সেটা থেকে তার ভালো আয় হচ্ছিল। অতঃপর আরো উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ৬৫ বছর বয়সে তিনি KFC নাম দিয়ে তৈরি করেছিলেন Kantaky Fried Chicken.
তাহলে দেখুন তার জীবনে যে সুযোগটা এসেছিল এটা কিন্তু খুবই সূক্ষ্ম এবং সেটা বোঝার উপায় ছিল না। তাহলে বোঝা গেল ধনী হওয়ার জন্য সুযোগকে সময়মতো কাজে লাগাতে হয়।
কপাল পুড়েছিল মার্ক জুকারবার্গের বন্ধুদেরও। facebook তৈরি করার সময়, তিনি তাদেরকে অফার করেছিলেন। কিন্তু তারা তখন এই সুযোগটি বুঝে উঠতে পারেনি।
শুধু যে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হয় তা কিন্তু নয়।
যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ারও মন-মানসিকতা থাকতে হয়। এক সময় গ্রামে গঞ্জে কলের গানের ব্যবসা জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু টেকনোলজি দ্রুত উন্নতি হওয়ার কারণে কালের বিবর্তনে সেগুলো হারিয়ে গেছে । সেই ব্যবসায় কোন অঞ্চল
১। এক সময় একচেটিয়া ব্যবসা করতো KODAK company. মোবাইল ফোনে ক্যামেরা সেট হওয়ার পরে ওদের কপাল পুড়লো। সারাবিশ্বে একযোগে বন্ধ হয়ে গেল এই কোম্পানিটি। কোনরকম বেঁচে যাওয়ার মত কোন ব্যবস্থা ও তাদের হাতে ছিল না।
সময়ের সাথে নিজেকে আপডেট করে নিতে হবে, অন্যথায় আমরা টিকতে পারবো না। Yahoo কোম্পানি Google কে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আবার Nokia কোম্পানি Android কে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আজ এদের পরিণতি দেখুন। বর্তমানে এই দুইটি কোম্পানিই মার্কেটে খুব খারাপ অবস্থায় আছে। একমাত্র কারণ সময়ের সাথে নিজেদেরকে পরিবর্তন না করা।
সময়ের সাথে নিজেদেরকে যারা বদলে ফেলতে পারে তাদের চমৎকার উদাহরণ হল google এবং facebook.
আমরা দেখতে পাচ্ছি ইতিমধ্য google কোম্পানি YouTube এবং Android কিনে নিয়েছে। Facebook কোম্পানিও বসে নাই। তারা Instagram এবং WhatsApp কিনে নিয়েছে।
Nokia কিন্তু সময়ের সাথে নিজেদেরকে বদলাতে পারেনি। যখন এন্ড্রয়েড ফোন বাজারে চলে এসেছে, তখন চায়নারা দ্রুত নিজেদেরকে বদলে ফেলেছে। নোকিয়ার স্থলে পুরো বাজার দখল হয়ে গেছে চায়না অ্যান্ড্রয়েড সেট দিয়ে।
অতীত সময়টা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নয়। বর্তমানটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি অতীতে কি ছিলাম আমার জন্ম কোথায় হয়েছে, এগুলা শুধু যাতনাই বাড়ায়।
বারাক ওবামা একজন আইসক্রিম বিক্রেতা ছিলেন।ইলন মাস্ক ছিলেন একটি কাঠের কারখানার শ্রমিক। তারা অতীতে কি ছিল এগুলো কোন ব্যাপার না।
সফলতার ক্ষেত্রে অতীত ভবিষ্যৎ এই শব্দগুলো কোন আপনার সফলতা নির্ধারণ করে না, বরং আপনার সাহস এবং কঠোর পরিশ্রম তা নির্ধারণ করে। জীবনে কখনো হাল ছাড়বেন না - কেবল মাত্র তারাই জয়ী হবেন যারা কখনো হাল ছাড়েননি।
কখনই কাউকে অবমূল্যায়ন করবেন না বা অসম্মান করবেন না। তাহলে আপনি বন্ধুহীন হয়ে পড়বেন। জীবনে কখন কাকে প্রয়োজন হয় আপনি কিন্তু জানেন না।
মনে রাখবেন যে কোন মূল্যে আপনাকে সফল হতেই হবে কারণ সাফল্য হল সেরা প্রতিশোধ।
সূত্র:বড় স্বপ্ন দেখুন, লক্ষ্য স্থির করুন,কঠোর পরিশ্রম করুন।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। কিভাবে ধনী হওয়া যায়? ধনী হওয়া কোন অলৌকিক বিষয় না। আলাউদ্দিনের চেরাগের দৈত্য কারো জন্য এসে হাজির হবে না।
লেবুর চারা লাগিয়ে যেমন বটগাছ পাওয়া যায় না, তেমনি ছোট চাকরি বা ছোট ব্যবসা দিয়ে কখনো ধনী হওয়া যায় না। ধনী হওয়ার জন্য প্রয়োজন:
১। পুঁজি ২। প্রতিষ্ঠান ৩। পরিকল্পনা ও ৪। পরিশ্রম।
ছোট চাকরি ছোট ব্যবসা ইত্যাদি দিয়েই মূলত হাঁটি হাঁটি পা পা করে একটি পুঁজি গঠন করে একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করে একদল নিবেদিত প্রাণ কর্মীকে নিয়ে বিশাল বড় ব্যবসায়িক একটা জগৎ গড়ে তুলতে হয়।
আমরা উদাহরণ হিসেবে গ্রামীণফোনের কথাই ধরি। গ্রামীণফোন; শুরুতেই কিন্তু তাদের কোটি কোটি গ্রাহক ছিল না। বর্তমানে তাদের কম বেশি সাত কোটি গ্রাহক রয়েছে। এরমধ্যে চালু সিম যুক্ত গ্রাহক যদি তিন কোটিও হয়, সবাই যদি প্রতিদিন এক টাকা করেও রিচার্জ করে, তাহলে প্রতিদিন গ্রামিনের কালেকশন হতে পারে তিন কোটি টাকা। আসলে এক টাকা করে কিন্তু কেউ রিচার্জ করে না । বাস্তবতায় এ টাকার পরিমান অনেক বেশি।
আমেরিকার বিখ্যাত ওয়েল কোম্পানির মালিক, মিস্টার জে পল গেটি বলেছেন, আমি আমার নিজের ১০০% পরিশ্রমের চেয়ে একশত মানুষের পরিশ্রম থেকে ১% পরিশ্রম নিতে বেশি পছন্দ করি যা আমার জন্য ১০০% হয়ে যায়। এইভাবে দল ভিত্তিক সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলতে পারলেই কেবল ধনী হওয়া সম্ভব।
একইভাবে ধনী হয়েছেন কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ডস, মাইক্রোসফট ।এরা এক জায়গায় বসে সারা বিশ্বে আউটলেট তৈরি করেছেন।
আপনি যদি রিক্সা দিয়েও শুরু করেন তাহলেও সমষ্যা নাই। ধরুন, একজন সারাদিন কাজ করে একটা রিক্সা থেকে ১০০০ টাকা আয় করে। আর আপনি যদি দশটা রিক্সা ছেড়ে দেন, প্রতি রিকশা থেকে যদি একশত টাকা করে আয় করেন, আপনার জন্য কিন্তু এক হাজার টাকা হয়ে যায়।
বাংলাদেশে যারা ধনী হয়েছেন, তারাও লক্ষ লক্ষ মানুষকে কাজে লাগিয়েই ধনী হয়েছেন। ৬৪ জেলায়ই তাদের ব্যবসাকে সম্প্রসারন করেছেন। তবেই তারা ধনী।
অতএব চলুন ধনী হওয়ার জন্য দলভিত্তিক সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলি সারাদেশব্যপী, এমনকি সম্ভব হলে সারা বিশ্বব্যপী।
0 Comments