ব্যবসায়ের প্রথম শর্তই হচ্ছে পূর্ব অভিজ্ঞতা। এজন্য পরামর্শ হলো:
১। কোন ব্যবসা শুরুর আগে যে কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে পাঁচ বছর কর্মচারী হিসেবে চাকুরী করে অভিজ্ঞতা নিতে হবে।
আবার বিখ্যাত ব্যবসায়ীদের জীবনী থেকে দেখা যায় কোথাও চাকরি না করেও তারা ব্যবসার অভিজ্ঞতা নিয়েছেন।
যেমন আমেরিকার বিখ্যাত ধনী ব্যক্তি ওয়ারেন্ট বাফেটের জীবনীতে দেখা যায় স্কুল লাইফ থেকেই সে পড়ালেখার পাশাপাশি বন্ধুদের কাছে চকলেট বিক্রি করতো। বাংলাদেশের বিখ্যাত ধনী ব্যক্তি মরহুম জহিরুল ইসলাম প্রথম জীবনে গ্রামের বাজারে তামাকের ব্যবসা করতেন। আকিজ গ্রুপের মালিক কলিকাতার রাস্তায় ভ্যানে করে সিলভারের পাতিল বিক্রি করতেন।
অর্থাৎ ছোট ছোট পুঁজি বিনিয়োগ করেও ব্যবসার অভিজ্ঞতা নেওয়া যেতে পারে।
২। ব্যবসাটি শুরু করার আগে ব্যবসার স্থান নির্ধারণ করতে হবে। যে জায়গায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলবেন, সেখানকার পরিবহন ব্যবস্থা , আপনার ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট ক্রেতাদের চাহিদা, ইত্যাদি বিবেচনায় আনতে হবে। অর্থাৎ জায়গাটি ক্রেতা বান্ধব কিনা তা যাচাই করা প্রয়োজন।
অনেক ক্ষেত্রে মোকাম ভিত্তিক ব্যবসাও গড়ে তোলা যায়। যেমন একসময় বাংলাদেশের ডান্ডি হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ ছিল পাটের ব্যবসার জন্য বিখ্যাত।
বর্তমানেও এরকম মোকাম ভিত্তিক ব্যবসা রয়েছে, নরসিংদীর বাবুরহাট কাপড় ব্যবসার জন্য বিখ্যাত। আবার ঢাকার মিটফোর্ড ওষুধ ব্যবসার জন্য বিখ্যাত। পুরান ঢাকার ধুলাইখাল লোহা লক্কর ব্যবসার জন্য বিখ্যাত।
তবে ব্যবসার অভিজ্ঞতা যদি একবার হয়ে যায়। অর্থাৎ আপনার ব্যবসাটি যদি একবার ব্র্যান্ডিং হয়ে যায়, তখন, যে কোন স্থানে বসে ব্যবসা করলেও ব্যবসা হবে।
৩। প্রথমেই খুব বড় অঙ্কের বিনিয়োগ দিয়ে ব্যবসা শুরু করার মোটেও সমীচীন নয়। উপরের আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন পৃথিবীর কোন বিখ্যাত ব্যবসায়ী বড় অংকের পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন নাই। একটি জায়গায় সফলতা অর্জন করার পরে সেখান থেকে তারা আরও দশটি ব্যবসা শুরু করে। এভাবেই কিন্তু একসময় গ্রুপ অফ কোম্পানিতে পরিণত হয়।
৪। আপদকালীন বিনিয়োগ করার সামর্থ্য থাকতে হবে। অর্থাৎ আপনি যে কোন ব্যবসা শুরু করেন না কেন ৫০% টাকা আপনাকে রিজার্ভ অর্থ অর্থাৎ আপৎকালীন ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য সঞ্চিত করে রাখতে হবে।
৫। যখন নিজের ব্যবসা শুরু করবেন অবশ্যই কর্মচারীর হাতে ক্যাশ এর দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। সবকিছু নিজে হ্যান্ডেল করতে হবে। ব্যবসা যখন বড় হয়ে যাবে তখন অবশ্যই সফটওয়্যার বেইস বিজনেস চালু করতে হবে । পার্সোনাল ওয়েবসাইট, মিডিয়া পেইজ থেকে শুরু করে যত লেটেস্ট টেকনোলজি আছে সব অ্যাপ্লাই করতে হবে। সে ক্ষেত্রে লেটেস্ট ভার্সনের অনেক সফটওয়্যার রয়েছে। যেগুলো দিয়ে কর্মচারী নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
তখন আর টাকা পয়সা নিয়ে টেনশন করার প্রয়োজন হবে না। আপনার পুরো প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার মানি ম্যানেজমেন্ট থাকবে যেটা সময়ের দাবি।
৬। দোকানের মাল ক্রয়ের জন্য পাইকারি বাজারে নিজে যেতে হবে। নিজে গিয়ে কেনার মধ্যে ব্যবসা করতে হবে । মনে রাখবেন বিক্রয়ের মধ্যে ব্যবসা নাই , মাল ক্রয়ের মধ্যেই ব্যবসা।
৭। সর্বোপরি কথা হল দীর্ঘমেয়াদি মাইন্ড সেট করতে হবে। কমপক্ষে ১০ বছর ব্যবসাটি চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে ব্যবসা কখনও বাড়তে পারে আবার কখনো কমতে পারে ।
অনেক সময় লস দিয়ে হলেও আপনাকে আপনার টার্গেট সময় পর্যন্ত ব্যবসাটি চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন সফলতার অন্তরায়।
0 Comments