কিভাবে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায় ?

 যারা ইতিমধ্যে আমার অন্যান্য লেখা থেকে নেতিবাচক চিন্তা ভাবনার কুফল এবং ইতিবাচক চিন্তা ভাবনার সুফল জেনেছেন এবং যে কোন মূল্যে ইতিবাচক মনোভাব অর্জন করতে চান, আজকের লেখাটি তাদের জন্য।


কিভাবে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায় ?


প্রথমেই দৃঢ় মনোবল তৈরী করতে হবে এইমর্মে, আমি যেকোন মূল্যে নিজেকে বদলাতে চাই। মনে রাখতে হবে যে, আপনার মনোজগতের প্রতিচ্ছবি কাজে লাগিয়েই আপনার পরিবর্তন আনতে হবে। কারন মানুষ মনে মনে যা ভাবে সেটাই ঠিক। এমনকি আমাদের অর্জিত জ্ঞানের চেয়েও শক্তিশালী। এজন্য বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন এর উক্তিটি উল্লেখযোগ্য।

তিনি বলেছেন,  মানুষের অর্জিত জ্ঞানের চেয়েও তার কল্পনা শক্তি বেশি শক্তিশালী।



মনোজতের ভাবনাটাই যে আমাকে তৈরী করে , তার প্রমান আমেরিকার বিখ্যাত লেখক নেপোলিয়ান হিলের লেখা বিখ্যাত বই। এজন্য একটি প্রবাদ আছে, মানুষ তার চিন্তার সমান বড়।

নেপোলিয়ন হিল যে বইটি লিখেছেন সেখানে বুঝাতে চেয়েছেন,  যে তুমি যা চিন্তা করবে সেটাই তুমি।


তাহলে চলুন দেখি যারা নিজেদেরকে বদলে নিতে চাই,  নীতিবাচক চিন্তাভাবনা পরিহার করে নিজেদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চাই,  তাদের জন্য কি কি  পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারেঃ


১। বিশ্বাসঃ


ধরুন একজন ছাত্র বিশ্বাস করে সে যতই লেখাপড়া করুক তার দ্বারা এসএসসি পাস করা সম্ভব না।
বলুনতো এই ছেলেটি এসএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করবে কিনা? নিশ্চয়ই না।
তাহলে বোঝা গেল ইতিবাচক মনোভাব অর্জন করতে গেলে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন। কেননা  আত্মবিশ্বাসী একটি  ছাত্র সাধারণত বলে থাকে,  একটি ছাত্র যদি পাশ করে ইনশাল্লাহ আমি পাশ করব।
তাহলে বিশ্বাসের key word হলো,

 If someone can do it, I can do it.

এ প্রসঙ্গে টমাস আলভা এডিসনের ঘটনাটি বলতে চাই। টমাস আলভা এডিসন শিশুকালে এতই বোকা ছিল যে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু কোন মা তার সন্তানের ব্যাপারে নেতিবাচক চিন্তা পোষণ করে না,  টমাস আলভা এডিসনের মা চোখের পানি ফেলে বলেছিল,  কোন সমস্যা নাই,  আমার ছেলেকে আমি পড়াবো এবং মায়ের এই আত্মবিশ্বাস  একদিন সফল হয়েছিল। টমাস আলভা এডিসন হয়েছিলেন বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী।



২। ইতিবাচক চর্চাঃ

ইতিবাচক চর্চা করার জন্য যে keyword গুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে, 
Think positive,  Talk positive and Work positive.


Think positive :

একজন মা যখন গর্ভবতী হন , তখন তার চিন্তা হলো উনার গর্ভে সুন্দর একটি শিশুর জন্ম লাভ করবে ।এজন্য চিকিৎসকগণও তাকে ভালো চিন্তা করা,  সুন্দর সুন্দর বই পড়া,  এমন কি সুন্দর শিশুর ছবি বানিয়ে বেডরুমে টানিয়ে রাখার পরামর্শ দেন । এর উদ্দেশ্য হলো উনি যেন সর্বদা গর্ভের সন্তানের ব্যাপারে ইতিবাচক চিন্তা করেন।

Talk positive:

আমরা কি আসলে ইতিবাচক কথা বলি ? নিশ্চয়ই না । কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় কেমন আছেন? উনি যদি বলে খারাপ না। তার মানে উনি ভালো আছেন কথাটি খারাপ শব্দ দিয়ে বুঝিয়েছেন। এরকম ভাবে আমরা জীবনে চলার পথ প্রায়শই না যুক্ত শব্দাবলি ব্যবহার করি ।

এক্ষেত্রে আমরা arrow and the song কবিতা থেকে শিক্ষা নিতে পারি। কবি বলেন , 
আমি একটি তীর ছুড়েছিলাম আকাশের দিকে। সেটি শূন্যে হারিয়ে গেল । কোথায় গেল আমি জানিনা।  কিন্তু বহু বছর পরে আমি তীরটাকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় খুজে পেয়েছিলাম একটি ওকে গাছে।
কবি বুঝিয়েছেন নেতিবাচক শব্দ যেগুলো মানুষের অন্তরকে বিদীর্ণ করে ঠিক এই তীরের মত।

তিনি আরোও বলেন , আমি একটি গান গেয়েছিলাম। সেটিও শূন্যে হারিয়ে গিয়েছিল। কোথায় গিয়েছিল আমি জানিনা । কিন্তু বহু বছর পরে এই গানটিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি খুজে পেয়েছিলাম এক বন্ধুর হৃদয়ে। 

কবি বোঝাতে চেয়েছেন,  ইতিবাচক কথা যা মানুষের হৃদয়কে প্রশান্তি দান করে,  যা নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করে। আর একজন মানুষের সফলতার জন্য বন্ধু ও সামাজিক সম্পর্ক অত্যন্ত প্রয়োজন। 
 এজন্য আমাদের সর্বদা ইতিবাচক কথা বলা চর্চা করতে হবে।

work positive:

আমাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সর্বদা ইতিবাচক কাজ করতে হবে অর্থাৎ ভালো ভালো কাজ করতে হবে। কিন্তু ধরুন একটি বাগানে লেখা আছে এখানে ফুল ছেড়া নিষেধ । এখন কোন ব্যক্তি যদি গাছটিকে উপড়ে নিয়ে যায়, তাহলে কি হবে? তিনি তো আর ফুল ছিঁড়েন নাই কিন্তু তার চেয়ে বড় অপরাধ করে বসে রয়েছেন। বলুনতো এটা কি ইতিবাচক কাজ হয়েছে?

৩। বড় চিন্তা করাঃ

বড় চিন্তা কেবল তারাই করতে পারে যারা ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা লালন করেন। কল্পনা করতে পারেন কত বড় চিন্তা করেছিলেন?  20000 লোক বাইশ বছর কাজ করে তাজমহলের মত বিশাল স্থাপনা তৈরি করেছিলেন। বলুন তো আমরা কি তার মত বড় চিন্তা করতে পারি?  তবে মনে রাখতে হবে যদি আমরা সত্যি সত্যি বড় চিন্তা করতে থাকি তাহলে একদিন অবশ্যই আমরা ইতিবাচক  মনোভাবের অধিকারী হয়ে যাব।



৪। বড় স্বপ্ন দেখাঃ


বড় স্বপ্ন দেখা জটিল প্রক্রিয়া । যিনি কুড়ে ঘরে বসবাস করেন,  তার স্বপ্ন বড়জোর একটি টিনের ঘর । যিনি টিনের ঘরে বসবাস করেন, তার চিন্তা একটা পাকা বাড়ি। আবার যার পাকা বাড়ি আছে, তিনি হয়তো টাওয়ার করার স্বপ্ন দেখেন।

স্বপ্ন মানুষকে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে শেখায়। মানুষ যখন বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকে তখন সে কঠোর পরিশ্রমী হয়ে যায়। সে তখন ইতিবাচক না হয়ে পারে না।



৫। ভাল পাঠক হওয়াঃ

অনবরত পড়ার মধ্যে থাকতে হবে। কারণ নবীজি বলেছেন, দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ কর। পৃথিবীর সবকিছু নেতিবাচক হতে পারে কিন্তু আপনার বইটি ইতিবাচক হওয়ার জন্য সর্বদা অনুপ্রাণিত করে।
আমি ইতিবাচক হওয়ার জন্য দুইটি বই উল্লেখ করলাম। আমি নিশ্চিত কেউ যদি এই দুইটি বই প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়তে থাকে, সে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব অর্জন করবে। এটি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা।




৬। আশাবাদী কাউকে অনুসরন করাঃ


এটি একেবারেই একটি বাস্তব কথা। কেউ যদি কোন ব্যার্থ মানুষকে অথবা কোন নেতিবাচক মানুষকে অনুসরণ করে , সে কখনোই ইতিবাচক চিন্তাভাবনার অধিকারী হতে পারবে না। ইতিবাচক চিন্তার অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারে আমেরিকার বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন।

সারা জীবন ব্যর্থ হয়ে শেষ জীবনে গিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে শেষ পর্যন্ত তিনি হাল ছেড়ে দেননি। একবারের জন্যও তিনি নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা করেননি। তিনি ছিলেন প্রচণ্ড আশাবাদী একজন মানুষ। আমরা যদি আমাদের দেশের সফল মানুষদেরকে খুঁজে বের করি,  প্রত্যেকের মধ্যেই আমরা দেখতে পাব তারা সবাই ছিলেন আশাবাদী। তারা ছিলেন শতভাগ ইতিবাচক চিন্তার অধিকারী। অতএব আমাদের কর্তব্য হল যে কোন একজন আশাবাদী মানুষকে অনুসরণ করা।






৭। যাবতীয় নেতিবাচক বিষয় পরিহার করাঃ


নেতিবাচক চিন্তা হচ্ছে ভাইরাসের মত। ভাইরাস যেমন আমাদের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি তৈরি করে , ঠিক নেতিবাচক চিন্তাও মানুষের ভিতরের সৃজনশীলতাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। এ ধরনের কিছু ভাইরাস হলো,

হতাশা, দুঃখবোধ, লজ্জা, ভয়, সন্দেহ, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি।

আমরা সোনা গহনা দামি জিনিস কোথায় রাখি? নিশ্চয়ই সিন্দুকে অতি যত্ন সহকারে রাখি।
ইতিবাচক চিন্তাভাবনাটাও হল এরকম দামি জিনিস। যেটাকে অবশ্যই আমি নিজের মধ্যে লালন করব।

অন্যদিকে আমাদের বাসার উচ্ছিষ্ট ময়লা আবর্জনা নিশ্চয়ই আমরা সিন্দুকে রাখিনা । এগুলো আমরা ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দেই। উল্লেখিত নেতিবাচক শব্দগুলো এরকম ডাস্টবিনের ময়লার মত। এগুলা আমরা আমাদের জীবন থেকে একেবারেই ছুড়ে ফেলে দেব।

কবি বলেন, 

করিতে পারিনা কাজ, সাদা ভয় সদা লাজ,
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে, পাচ্ছে লোকে কিছু বলে।

কবিতাটিকে যদি আমরা অন্যভাবে বলি,

করিতে পারি সব কাজ, নাহি ভয় নাহি লাজ,
সংশয়ে সংকল্প নাহি টলে, পাছে লোকে যে যাই বলে।

ইতিবাচক চিন্তার জন্য দ্বিতীয় কবিতাটি একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। সমস্ত নেতিবাচক চিন্তাগুলো বা ভাইরাস গুলো পরিহার করতে পারলেই কেবল আমাদের মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা কাজ করা শুরু করবে।

ধরুন একটা গ্লাসে ময়লা পানি আছে। ওই অবস্থায় কি এর মধ্যে সুমিষ্ট শরবত ঢালা সম্ভব ? নিশ্চয়ই না। শরবত ঢালতে হলে অবশ্যই গ্লাসটি থেকে যাবতীয় খারাপ জিনিস অপসারণ করতে হবে।  তারপরেই কেবল এটির মধ্যে শরবত ঢালা যেতে পারে।



৮। সর্বদা কাজে থাকাঃ

বলা হয়, An idle brain is the devil's workshop. অর্থাৎ অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। আমরা যদি সত্যিই ইতিবাচক হতে চাই, তাহলে সর্বদা কাজে থাকতে হবে। সর্বদা কাজে থাকলে শয়তান আমার ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। যখনই আমার কোন কাজ থাকবে না,  তখনই ভিতরে নানান ধরনের কু চিন্তা এবং খারাপ কাজের প্রবণতা তৈরি হবে।



৯। অন্যকে দোষারোপ ও দায়ীকরন পরিহার করাঃ 


ধরুন কোন ছাত্র পরীক্ষায় ফেল করেছে। এক্ষেত্রে ছাত্রটি বলে , আমার তো কোন দোষ নেই। সমস্ত দোষ হলো বিদ্যালয়ের।  শিক্ষকরা দায়িত্বশীল ছিল না। অথচ একই ক্লাসে একই শিক্ষকের নিকট লেখাপড়া করে বাকি 99 জন সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে।

অন্যদিকে তার অভিযোগ হল পরিবারের উপর। পরিবারের লোকজন ঠিকমত তার টিউশন ফি দেয় নাই।

 অথচ একই ক্লাসে অনেকেই লেখাপড়া করে যার হয়তো বাবা-মা কেউ নাই।

অন্যদিকে যারা ইতিবাচক চিন্তার অধিকারী,  ওরকম একজন ছাত্র বলে,

শিক্ষকরা খুবই যত্নশীল ছিলেন । বাবা মা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। 

জীবনে যারা বড় হয়ছেন,  তারা কেহই অভিযোগকারী ছিলেন না। আমরা দেখতে পাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রাস্তার বাতির নিচে বসেও লেখাপড়া করেছেন । যদি তার অভিযোগ থাকতো তাহলে তিনি কখনোই রাস্তার বাতির নিচে বসে পড়াশোনা করতেন না।




১০। ভুলে যাওয়া ও ক্ষমা করে দেওয়াঃ


ভুলে যাওয়া এমন একটি মানদন্ড যার কারণে ভিতরের যত চাওয়া পাওয়া সহ নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা আছে,  সেগুলো থেকে আমরা ভুলে যাওয়ার মাধ্যমে রেহাই পেতে পারি।

অন্যদিকে আমার ভিতরে এমন কিছু অভিযোগ আছে যেগুলা মোটেও ভোলা যায় না। এমতাবস্থায় করণীয় হলো, ক্ষমা করে দেওয়া।

একজন লেখকের কথা বলি । যদিও আমি তার নাম ভুলে গিয়েছি । লেখক এর বাবা তার ছোটবেলায় তার মাকে ফেলে চলে যায়। ছোট্ট শিশুটির মনে সেই তখন থেকেই একটি প্রতিহিংসা জন্ম লাভ করে। কোন অবস্থায় সে মন থেকে তার বাবাকে ক্ষমা করতে পারছিল না। তার প্রশ্ন ছিল যে এমন বাবাও পৃথিবীতে হয় সন্তান কে ফেলে রেখে এভাবে চলে যায়? তীব্র ঘৃণা ও প্রতিহিংসা নিয়ে সে বড় হয় এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে বড় হয়ে সে এর  প্রতিশোধ নিবে। তার খাওয়া নেই,  ঘুম নেই , লেখাপড়া নেই। প্রচন্ড অশান্তি নিয়ে সে বড় হল।

মানুষের কাছ থেকে সে তার বাবার ঠিকানা সংগ্রহ করল এবং সেখানে গিয়ে শুনলো তার বাবা মারা গেছে। তখন সে প্রতিজ্ঞা করল তার বাবার কবরে সে থুতু মেড়ে আসবে। কিন্তু কবরের গায়ে একটি লেখা দেখে তার ভিতরে বিশাল পরিবর্তন চলে আসলো।

লেখাটি ছিল,

Forgiveness is the fragrance of life.

কথাটি পড়ে তার মনে বাবার প্রতি ক্ষমার উদয় হলো। চোখ দিয়ে অঝরে পানি বয়ে গেল। মনে মনে ভাবলো আহা বাবা যদি বেঁচে থাকত অন্তত বাবা কেমন ছিল দেখতে তো পারতাম ।

লেখক তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, সেদিন থেকে তার মন থেকে যাবতীয় নেতিবাচক চিন্তা চলে যায়। এবং এই পৃথিবীর সুন্দর জিনিসগুলো সে উপভোগ করতে থাকে এবং তার ভিতরে সৃজনশীলতা তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে তিনি বিখ্যাত লেখক হয়েছিলেন।

অতএব সিদ্ধান্ত নিতে হবে , এই পৃথিবীতে আমার কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। বরং যে যতটুকু কর্তব্য করেছে সেটুকুর জন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

সেবার অগ্রদূত মাদার তেরেসা বলেন , তুমি যদি মানুষকে বিচার-বিশ্লেষণ করো তাহলে তাকে কখনো ভালবাসতে পারবে না। ভালোবাসার একমাত্র উপায় হল ক্ষমা করে দেওয়া।



১১। ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে দিবসের সূচনাঃ


রেডিও টিভি পত্র-পত্রিকায় অহরহ নানান নেতিবাচক বিষয় প্রচারিত হয় । দিবসের সূচনাকালে এর সমস্ত তথ্য নিজের মধ্যে না নেওয়াই ভালো । বরং মনের মধ্যে একটি সুন্দর আমেজ তৈরি হয় এ ধরনের পিওর বিনোদনমূলক কিছু করা যেতে পারে । যেমন টিভিতে কার্টুন ছবি দেখা এটা হল নির্ভেজাল আনন্দ।



১২। যথাযথ পোশাক পরিধান করাঃ


আমরা যখন ইস্ত্রি করা জামা কাপড় পরিধান করে কালি করা জুতাসহ পরিপাটি হয়ে যখন বের হই,  তখন আমাদের মনের এনার্জি শতভাগ কাজ করে।

অন্যদিকে পুরাতন স্যান্ডেল ও জামা কাপড় গায়ে দিয়ে বের হলে নিজের মধ্যে একটা হতাশা কাজ করে। ধরুন একজনের খোঁচা খোঁচা দাড়ি , ঝোলা জামা,  পায়ে স্যান্ডেল উদাস ভাবে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে । মানুষ তাকে নিয়ে ভাববে হয়তো পদ্মায় বাড়িঘর ভেঙ্গে নিয়ে গেছে,  অথবা তার প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এই ধরনের মানুষের মন এতই নেতিবাচক হয়ে যায় যে,  তাকে ফিরিয়ে আনা আর সম্ভব হয় না। অতএব পোশাক পরিচ্ছদে একেবারে শতভাগ ফিটনেস নিয়ে আসতে হবে।



১৩। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখাঃ


একটি প্রবাদ রয়েছে, A sound mind in a sound body.

অর্থাৎ সুস্থ দেহে সুস্থ মনের বিকাশ। অসুস্থ মন মানেই হচ্ছে নেতিবাচক চিন্তাভাবনায় পরিপূর্ণ একটি মন। শরীর যদি সুস্থ না থাকে,  সারাক্ষণ মনের ভিতর নানান নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ভরপুর থাকে। অতএব নিয়মিত ঘুম , গোসল এবং পুষ্টিকর খাওয়া , ব্যায়াম ইত্যাদি চালিয়ে যেতে হবে , যাতে শরীরে শতভাগ ফিটনেস বজায় থাকে।



১৪। সুন্দর ব্যক্তিত্ব্য অর্জন করাঃ


যদি কোন ব্যক্তির ব্যাপারে সামাজিকভাবে একটি সুন্দর ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়ে যায়,  সে কখনো এর নিচে নামতে পারে না। তার দ্বারা কোন খারাপ কাজ সংগঠিত হতে পারেনা। সে কখনোই নেতিবাচক চিন্তার অধিকারী হতে পারে না। কথাবার্তা চালচলন সর্বক্ষেত্রে একটি অনুপম আদর্শ নিয়ে জীবনটাকে দ্রুত গড়ে ফেলতে হবে।



১৫। অন্যের উপর নির্ভরশীলতা পরিহার করাঃ


মানুষ যখন নিজেই নিজের জীবনের দায়িত্ব নিয়ে নেয়, তার ভিতরে সৃজনশীলতা শতভাগ কাজ করতে শুরু করে। সে তার জীবনকে গড়ার জন্য পাথরের মূর্তিটির মতো নিজেকে আবিষ্কার করার কাজে উঠে পড়ে লেগে যায়। অতএব আমাদেরকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।




১৬। নাছোর বান্দা মনোভাব অর্জন করাঃ


ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা মানুষ কখনোই হাল ছেড়ে দেয় না। আমরা ছবিতে দেখতে পাচ্ছি ব্যাংঙটি গণধরকরণ হয়ে যাচ্ছে এর পরেও সে হাল ছাড়ছে না। অতএব সফল না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়া যাবে না। যে কোন মূল্য বারবার হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েও আবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে । মনে রাখতে হবে টানেলের শেষ প্রান্তে ওই আলোকরশ্মিটি পর্যন্ত আমাকে পৌঁছাতে হবে।



এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেক গবেষণা রয়েছে। স্বল্প পরিসরে আমি আলোচনা করার চেষ্টা করলাম। অনেক বইয়ের রেফারেন্স রয়েছে। এই বিষয়ের উপরে যদি সম্ভব হয় Napoleon Hill এর think and grow rich বইখানা পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।

Post a Comment

2 Comments