আমরা সবাই সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন চাই। নিঃসন্দেহে মেদভূঁড়ি একটি অস্বাভাবিক অবস্থা।
মেদভূঁড়ি কমাতে হলে প্রথম জানতে হবে কেন এই মেদভূঁড়ি হল। সেই কারণগুলি যথাযথভাবে খুঁজে বের করে সেগুলি পরিহার করলেই হয়ে গেল। কিন্তু চাইলেই কি বদভ্যাস ত্যা করা যায় ?
মনে রাখতে হবে যে প্রকৃয়ার মাধ্যমে ভূঁড়ি তৈরী হয়েছে সেটা রিভার্স করেই কেবল পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে হবে। এটাই প্রকুতির নিয়ম। এর বাইরে বিভিন্ন মেশিন ব্যবহার করা বা সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করার মাধ্যমে মেদ কমানোর চেষ্টা, জোড় করে কাঁঠাল পাকানোর মতই ব্যাপার।
চলুন দেখি এই মেদ কেন হলঃ
১। খাদ্যাভ্যাস: সাধারণত:
অধিকাংশ মানুষই ভোজন রসিক। যখন খাওয়া শুরু করি, তখন আমাদের হুশ থাকে না। গলা পর্যন্ত ভরে খেয়ে তারপরে তৃপ্তির ঢেকুর ছাড়ি। এর পরিণাম কয়জনই বা চিন্তা করি ?
অথচ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়ালিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা এক তৃতীয়াংশ খাবার দিয়ে, এক-তৃতীয়াংশ পানি দিয়ে এবং আরেক তৃতীয়াংশ বাতাস দিয়ে পেট ভর্তি কর।
এই নিয়ম আমরা কয়জনে মানি? পরিনামে বিশাল মেদ ভুঁড়ির অধিকারী হয়ে দম আসে আর যায়।
২। খাওয়ার পরেই শুয়ে পড়া:
এটি মারাত্মক একটি বদ অভ্যাস। একে তো ভুড়িভোজ, তার ওপর খাবার আমাদের পরিপাকতন্ত্রে জায়গা না নেওয়ার আগেই শুয়ে পড়ে নানান বৈকল্য আমরা তৈরি করি। খাবার পাকস্থলী থেকে বিভিন্ন এনজাইম মিশ্রিত হয়ে কোলনে পৌঁছার জন্য শরীরকে একটু মুভমেন্টে বা নড়াচড়ায় রাখা প্রয়োজন। খাওয়ার অন্তত এক দেড় ঘন্টা পরে ঘুমাতে যাওয়া উচিত।
৩। সূর্যোদয়ের পরেও ঘুম:
মারাত্মক একটি বদ অভ্যাস। এই সময় ঘুমানো অকাল মৃত্যুর কারণ, এটাই বিশেষজ্ঞদের মতামত। এতে ভোরের আলো এবং মুক্ত বাতাস সেবন থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়। অথচ অধিকাংশ মানুষই এই সময়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হতে পারে না। প্রত্যুশে শয্যাত্যাগ করাই প্রকৃতির নিয়ম।
কবি বলেন,
পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল,
কাননে কুসুম কলি সকলই ফুটিল।
প্রকৃতি জেগে উঠেছে। হে অলস অবোধ, আর ঘুমিয়ে থেকো না । নিয়মের ব্যতিক্রম করলে তুমি তো অস্বাভাবিক দেহের অধিকারী হবেই।
৪। পরিশ্রম না করা:
রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত একটি পরিকল্পিত দিন যাপনের রুটিন থাকতে হবে। কয়জনের আছে? টাকা পয়সা থাকলে তো আর কোন কথাই নেই। সারাদিন খাও আর ঘুমাও। প্রস্তুত থাকতে হবে অচিরেই শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ , উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা এই সমস্ত রোগ ধেয়ে আসতেছে।
৫। প্রানীজ প্রোটিন:
মাসে ১-২ বার খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ ভূড়িওয়ালা ব্যক্তির ডাটা সংগ্রহ করলে দেখা যায় , প্রায় প্রতিদিনই এরা প্রাণিজ প্রোটিন ভক্ষণ করছে। যদি খেতেই হয় তাহলে চিকেন অথবা মাছ খাওয়া যেতে পারে। মাটন, বিফ ইত্যাদি রেড মিট সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা উচিত।
৬। প্রক্রিয়াজাত খাবার:
কেক, চানাচুর, বিস্কুট, বার্গার শর্মা, কাবাব, পিজা এই সমস্ত অস্বাভাবিক খাবার গুলোতে দেহের পুষ্টি উপাদান নাই বললেই চলে। ফুড বিশেষজ্ঞগণ বলেন ৬৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি তাপমাত্রায় খাবারকে যখন ফ্রাই করা হয় তখন এর পুষ্টিগুণ পুড়ে যায়। ব্যাপক পরিমাণে টক্সিন থাকার কারণে দীর্ঘ মেয়াদে এগুলো থেকেই দেহে তেল চর্বির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৭। ভোজন ক্রমবৃদ্ধি:
এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। স্বাভাবিক চোখে এটা বোঝা মুশকিল।
ধরুন একজন আজকে যে পরিমাণ খাবার খেলো এটার কারণে তার দেহে সেলের পরিমাণ যতটুকু বৃদ্ধি পেল, তাতে তার খাবারের চাহিদা কিছুটা বেড়ে গিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই তার দেহকোষের পরিমান আরেকটু বাড়লো। ফলে খাবারের চাহিদা আরো বেড়ে গেল। এক সময় দেখা যায় যে পাঁচ বাটি মাংস, ৪০টা রুটি, ৮০টা ডিম খেয়েও তার তৃপ্তি হচ্ছে না । তার দেহের কোষের সংখ্যা আরো যখন বেড়ে যায় , খাবারের চাহিদা আরো বেড়ে যায় , আমাকে আরো খাবার দাও, আরো খাবার দাও বলে তখন সে চিৎকার করতে থাকে। ইউটিউবে ভিডিও দেখুন।
৮। অস্বাভাবিক জীবন যাপন:
মন চাইলো এখনই গিয়ে বারে মদ খাওয়া শুরু করল। মন চাইলো খাসি একটা জবাই করে বন্ধুরা মিলে খেয়ে ফেলল। মন চাইলো একটা গরু জবাই করে খেয়ে ফেলল। মন চাইলো বন্ধুরা মিলে সারারাত আতশবাজি ফুটিয়ে মৌজ মাস্তি করে সারা রাত পার করে দিল। নানান প্রকার রোগব্যাধির জন্য প্রস্তুত হও হে অপরিণামদর্শী।
৯। আধুনিক ডিভাইস:
সারারাত মোবাইল চালিয়ে মোবাইলটি বুকের উপর রেখেই বেঘুরে ঘুম। সারারাত এসি চালিয়ে ঘুমালো, ঘুম থেকে উঠে ল্যাপটপ , মোবাইলটা সাথে নিয়ে এসি গাড়িতে চলে গেল। লিফটে উঠলো অফিসে । যেখানে বসলো সেখানে চারপাশে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ।প্রকৃতির সাথে তার জীবনের কোন সম্পর্ক নেই। প্রস্তুত থাকো হে বন্ধু, ক্যান্সার লিভার সোরসিস , আলসার, ব্রেন ক্যান্সার এর মত মারাত্মক ব্যাধি তোমার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
১০। খাদ্যের ছয় ধরনের উপাদানের অভাব:
বাজারে গিয়ে ব্যাগ ভর্তি করে শুধু সবুজ তরকারি কিনে নিয়ে আসলেন। আপনার আমার বডির জন্য শুধু কি ভিটামিন সি প্রয়োজন? অথচ রঙিন শাকসবজি ফলমূলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। খাদ্যের ছয় ধরনের উপাদানের মিশ্রণ থাকতে হবে এটি শিক্ষিত ব্যক্তি মাত্রই জানে। কিন্তু কি জঘন্য ব্যাপার , শুধু সবুজ খাচ্ছে। বাজার করার সময় দেখা যাচ্ছে যে সেখানে ভিটামিন এবং মিনারেল যে সমস্ত খাবারের রয়েছে এগুলো কিনার কোন চিন্তাই নেই।
পরিশেষে এটাই বলব উপরে যে ১০ টি সমস্যার কারণে আজকে অস্বাভাবিক দেহের অধিকারী হয়েছেন, জাস্ট এর উল্টা পথে প্র্যাকটিস করলে আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া যেতে পারে।
ধরুন মেদভুঁড়ি আরো বেড়ে যাবে বেশি করে মিষ্টান্ন খেলে।
আবার মেদ ভুরি কমতে থাকবে বেশি করে আমড়া পেয়ারা এ সমস্ত ফলমূল খেলে।
কিন্তু মন কি চায়? যেগুলো খেলে আরও অস্বাভাবিক দেহের অধিকারী হবেন সেগুলোই আপনার মন চায়। কারণ আপনি রসনা বিলাসী।
যখন ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছেন না। উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছেন না। মানুষ আপনার বিশাল পেট নিয়ে হাসাহাসি করছে। তখন বিভিন্ন মেশিন কিনে , সাপ্লিমেন্ট কিনে অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে মেয়াদ কমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকুন। কোন লাভ হবে না। এ পর্যন্ত কেউ এই পথে সফল হতে পারেনাই । শুধু টাকাই নষ্ট হবে। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ফিরে আসুন। সময় এখনি।
0 Comments