ঈমানের বিষয়টি কারো ব্যক্তিগত মতামতের বিষয় না ।
আমার জানা মতে যে বিষয়গুলো সরাসরি ঈমান বৃদ্ধি করার জন্য কোরআনের নির্দেশনা রয়েছে, আমি সেগুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।
১। অর্থ বুঝে কোরআন তেলাওয়াতঃ
সরাসরি আল্লাহর কালাম থেকে ঈমান বৃদ্ধি হবে এতে কোন সন্দেহ নেই । আমরা যদি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের দিকে তাকাই তিনি ও তার সঙ্গী-সাথীগণ কোরআন প্রেমিক ছিলেন।
অতএব প্রতিদিন যদি আমরা অর্থসহ একটি নির্দিষ্ট সময় করে কোরআনের মর্ম উপলব্ধি করতে পারি , আমার বিশ্বাস আমাদের ঈমান দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
২। আল্লাহ কে সর্বোচ্চ স্থানে রেখে ভালোবাসাঃ
আল্লাহ বলেন , হে ঈমানদারগণ তোমাদের ধন সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে তোমাদেরকে ফিরিয়ে না রাখে।
৩। রাসুল (সা:) এর পূর্ণ আনুগত্যঃ
আল্লাহ বলেন , হে নবী আপনি বলে দিন , তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসতে চাও, তাহলে আমার আনুগত্য কর। তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন।
৪। নায়েবে নবী (সা:) এর পূর্ণ অনুগত্যঃ
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন , তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো , রাসূলের (সা:) আনুগত্য করো এবং রাসূলের অবর্তমানে তোমাদের নিজেদের মধ্যে যিনি নায়েবে নবী ওনার আনুগত্য কর।
মনে রাখতে হবে , রাসুলের ইন্তেকালের পরে প্রত্যেক যুগের জন্য একজন করে নায়েবে নবী ছিলেন, বর্তমানেও আছেন এবং সর্বশেষ ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের যুগের অবসানের মধ্য দিয়ে এই পৃথিবী ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
৫। প্রত্যেক যুগের নায়েবে নবীকে ভালোবাসাঃ
ধরুন ইয়াজিদের যুগে নায়েবে নবী কে ছিলেন? আপনারা বলবেন যদিও ইয়াজিদ ক্ষমতায় ছিল কিন্তু নায়েবে নবী ছিলেন ইমাম হোসেন আলাইহিস সালাম।
চলুন দেখি আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেন ?
নবীজি বলেন হোসাইন আমার থেকে এবং আমি হোসেন থেকে। নবীজি আরো বলেন আমি হোসেনকে ভালোবাসি। যে ব্যক্তি আমার হোসাইনকে ভালোবাসবে আমিও তাকে ভালোবাসবো।
আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাবে এজন্য আমি বিস্তারিত বিবরণ দেইনি । প্রত্যেক যুগের নায়েবে নবীদের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তা হচ্ছে ভালোবাসা! ভালোবাসা!! ভালোবাসা!!!
৬। আল্লাহর রাহে কোরবানিঃ
আল্লাহ বলেন, তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের সর্বোত্তম জিনিস কোরবানি করতে না পারবে, ততক্ষণ তোমরা পূর্ণ মোমিন হতে পারবে না।
আমার আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন , তোমাদেরকে আমি এমন একটি ব্যবসার কথা বলব , যে ব্যবসাটি তোমাদেরকে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে রক্ষা করবে ? তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান আন এবং রাসূলের উপর এবং সংগ্রাম কর আল্লাহর পথে তোমাদের মাল এবং জান দিয়ে। ইহাই তোমাদের জন্য উত্তম হতো যদি তোমরা জানতে।
৭। কায় মনে প্রার্থনা করাঃ
আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আসমান এবং জমিনের সৃষ্টির মাঝে দিবস রজনীর পরিবর্তনের মাঝে, চিন্তাশীল জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে নিদর্শন । যারা দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় এবং শোয়া অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান এবং জমিনের মাঝে যা কিছু আছে সেগুলো নিয়ে । এবং প্রার্থনা করে , হে আমাদের প্রতিপালক আপনি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেন নাই , আমাদেরকে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে বাঁচান।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রাত্রে শেষভাগে তাহাজ্জুদের সময় আসমানের দিকে তাকিয়ে এই আয়াতে কারীমা পাঠ করতেন
আমাদের জন্য নবীজি এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন, বিনিদ্র রজনীতে কায় মনে তার দরবারে প্রার্থনা করা এটিই হচ্ছে মুমিন জীবনের শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন।
৮। সৃষ্টির সেবা করাঃ
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিস রয়েছে। যেখানে উল্লেখ রয়েছে, হাশরের দিন খোদাতালা তার বান্দাদেরকে ডেকে বলবেন , হে আদম সন্তান তুমি তো আমার সেবা করো নাই , আমি যখন অসুস্থ ছিলাম। মানুষ বলবে হে প্রভু! তুমি তো আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমরা কেমনে তোমার সেবা করবো ? তখন আল্লাহ বলবেন
অসুস্থ মানুষ তোমার কাছে গিয়েছিল, সেবা চেয়েছিল, যদি তাকে সেবা দিতে আমাকেই সেবা দেওয়া হতো।
আল্লাহর বলবেন হে আদম সন্তান , তুমি তো আমাকে খাবার দেও নাই । তখন বান্দা বলবে , আপনি তো আমাদের সৃষ্টিকর্তা । আপনাকে আমরা কিভাবে খাবার দেবো। তখন আল্লাহ বলবেন, ক্ষুধার্ত বান্দা তোমার দুয়ারে গিয়েছিল খাবারের জন্য। যদি তুমি তাকে খাবার দিতে, তাহলে আমাকেই খাবার দেওয়া হতো।---------শেষ পর্যন্ত।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার হক আমি যদি আদায় নাও করতে পারি, উনি গাফুরুর রাহিম , আমাদেরকে হয়তো ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু বান্দার হক যদি আমরা আদায় করে না যাই আল্লাহ সেদিন কিন্তু আমাদেরকে ছাড়বেন না।
বরং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দাদেরকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
বল নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর জন্য এবং অবশ্যই আমি তার কাছে প্রত্যাবর্তন করব ।
এই আয়াতে কারীমা দিয়ে আল্লাহতালা বান্দাদেরকে হুশিয়ার করে দিয়েছেন। খবরদার তুমি যেমন খুশি তেমন চলার কোন সুযোগ নাই ।বান্দার হক শতভাগ পালন করে আমার কাছে কিন্তু তোমার আসতেই হবে।
বন্ধুগণ উপরে যে বিষয়গুলো আলোচনা করেছি, আমাদের দিল দেমাগে ২৪ ঘন্টা যদি এই বিষয়গুলি আমরা মাথায় রাখি , নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই ইনশাল্লাহ আমাদের ঈমান তাজা হবে । আল্লাহ তা'আলা আমাদের প্রত্যেকের ঈমানের উপর মজবুত থাকার তৌফিক দান করুন , আমীন!!
1 Comments
খুব সুন্দর ও দরকারি পোস্ট সবার জানা দরকার
ReplyDelete