EGO, মানব জীবনের সমস্ত অর্জন ধ্বংস করার জন্য এই একটি শব্দই যথেষ্ট।
EGO শব্দটি দিয়ে মূলতঃ বুঝায়, আত্মদম্ভ বা আত্মঅহংকার। যে মহান কারিগর বিশাল এক জৈব জটিল প্রকৃয়ার মাধ্যমে মানবদেহকে অস্তিত্বে এনেছেন, কোন চিন্তশীল , জ্ঞানী ব্যাক্তির পক্ষে অহংকারী হওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়।
ধরে নিলাম কোন ব্যক্তি এনাটমী জানে না, সে জ্ঞানের অভাবে অহংকারী হতেই পারে। কিন্তু এই ব্যক্তি যদি নদী বা সমুদ্রে জাহাজে করে ঝড়ের কবলে পতিত হয়, বাহাদুরী কোথায় যাবে ?
ঠিক আছে ঝড় থেমে গেলে সে আবার অহংকারী হতেই পারে। বাসায় আসার পর শুরু হল ডায়রিয়া । নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে, দম আসে আর যায়। ডাক্তারকে হাতে-পায়ে ধরে বলে , আমাকে বাঁচান। কোথায় গেল দম্ভ ?
আদ এবং সামুদ জাতির লোকজনের দৈত্যের মত চেহারা ছিল। তারা ছিল চরম দাম্ভিক। ওরা ভেবেছিল তাদের কিছুই হবে না। মহান আল্লাহ এই দাম্ভিকদেরকে ধ্বংস করে অনাগত কালের মানুষরেকে সাবধান করেছেন। মানুষ কি নসীহত গ্রহন করে ?
EGO শব্দ বিশ্লেষনঃ
’
E=Evil , G=Goes , O=On,
তাহলে বাক্যটি হল, Evil goes on.
অর্থাৎ শয়তান যায়। কার ভিতর দিয়ে শয়তান যাওয়া আসা করে ? উত্তর হল, সেই ব্যাক্তির ভিতর দিয়ে যার ভিতর EGO আছে।
EGO কেবল তারই শোভা পায় যার কোন ক্ষয় নাই , লয় নাই, পরাজয় নাই , সবাই যার মুখাপেক্ষী। কে সেই সর্বশক্তিমান ? তিনি হলেন মহান সৃষ্টিকর্তা।
আপনি নিজের মধ্যে EGO লালন করেন ? তাহলে কার আসনে নিজেকে বসালেন ? একবার ভেবে দেখেছেন ?
অনেকে ভাবতে পারেন , তাহলে কি সৃষ্টিকর্তার মাঝেও শয়তান যতাযাত করে ? নাউযুবিল্লাহ।
আল্লাহ হলেন খােলিক্ক-সৃষ্টিকর্তা, আর শয়তান হল মাখলুক্ক-সৃষ্ট। সৃষ্ট জীব কখনও স্রষ্টার ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারবেনা। তাঁর কাছে পৌঁছাতে হলে তাঁর ছিফাত অর্জন করে তাঁর রঙে নিজেকে রাঙাতে হবে।
শয়তান বিতাড়নঃ
১। নিঃশর্তভাবে আল্লাহর আনুগত্যের অধীন হলে শয়তান এমনিতেই পালাবে।
২। উগ্রতা পরিহার করলেই শয়তান পলাবে। কেননা আল্লাহ বলেন, তোমরা দম্ভ করে জমীনে চলাফেরা করোনা।
৩। দিন শেষে মুরাকাবায় ( ধ্যান ) বসে আত্মশুদ্ধি করলে শয়তান পলাবে। কেননা আল্লাহ বলেন, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারলো সে সফলকাম হলো।
৪। বেহুদা বা ফালতু কাজ যেমন নাচ-গানে মত্ত হওয়া, জুয়ার আসর বসানো, হাউজি যাত্রাপালা আয়োজন করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকলে শয়তান পালাবে। কেননা, মমিন বান্দা বেহুদা কাজ করে না। আর বেহুদা কাজের কারনে মানুষের দিল মরে যায়।
৫। পরিবার , সমাজ ও দেশের মানুষ ও আল্লাহর সৃষ্ট জীব-জন্তুর প্রতি দয়ালু হলে শয়তান পলাবে। কেননা, নিষ্ঠুরতা মানুষকে পশুর চেয়েও নীচে নামিয়ে ফেলে।
এর প্রমান আমরা দেখতে পাই অতীত কালের শাসকদের মধ্যে। চেঙ্গিস খানের বাগদাদ হত্যাকান্ড, তৈমুর লং এর দিল্লী হত্যাকান্ড, এজিদ বাহিনীর দ্বারা কারবালায় ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম বর্বরোচিত হত্যাকান্ড, এরকম হাজারো ঘটনায় আমরা দেখতে পাই যে কিভাবে এদের ঘাড়ে শয়তান ভর করেছিল।
অথচ সহীহ হাদিসে আমরা দেখতে পাই, যেব্যাক্তি একজন মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করল, সে যেন পুরা মানব জাতিকে হত্যা করল।
৬। এছাড়া আমাদের জীবন ও সম্পদ নিয়ে যদি আমরা আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করতে পারি, তাহলে এটা হল সবচেয়ে বড় মেডিসিন। এই সংগ্রামের পথে যারা থাকেন, তাদের ধারে কাছেও শয়তান আসতে পারে না। এই সংগ্রাম বক্তৃতা বিবৃতি লেখনি বিভিন্নভাবে হতে পারে। আর এই সেক্রিফাইস বা উৎসর্গ করা, এটি যারা করতে পারেন, তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে যাবেন। ফলে শয়তানি চক্র তাদের মধ্যে আর কাজ করতে পারবেনা।
কেননা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার পবিত্র কালামে পাকে সূরা সফ এ বর্ণনা করেছেন , তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসার কথা বলব? যা তোমাদেরকে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে রক্ষা করবে। তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করো এবং তোমাদের জান এবং মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম কর। ইহাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে।
প্রিয় পাঠক, কেহ যদি দয়ালু, পরোপকারী মানবপ্রেমী হতে পারে, সে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য আলোকবর্তিকা হিসাবে কাজ করে। তার ভিতর থেকে শয়তান হাজার মাইল দূরে অবস্থান করে। তাঁর ভিতর EGO নামক দুষ্টচক্র আর কাজ করতে পারে না।
0 Comments