মনোভাব পরিবর্তনে কি জীবন পরিবর্তন হয় ?

ATTITUDE শব্দের অর্থ হল মনোভাব। মানুষের মনে সর্বদা দুইটা ভাব বিরাজমান থাকতে দেখা যায়।

মনোভাব পরিবর্তনে কি জীবন পরিবর্তন হয় ?


আমরা যদি ইংরেজী অক্ষরের স্থানাঙ্ক নির্ধারন করি তাহলে ATTITUDE শব্দের অক্ষর গুলির স্থানাঙ্ক কত হয় দেখি।


A = 1 , T = 20 , T = 20 , I = 9 , T = 20 , U = 21 , D = 4 , E = 5 ; 

চলুন দেখি এদের যোগফল কত হয় ।

1 + 20 + 20 +9 + 20 + 21 + 4 + 5 = 100 

ATTITUDE এমন একটি শব্দ যা বিশ্লেষন করলে দেখা যায় মানুষের জীবনের শতভাগ সফলতা নির্ভর করে ATTITUDE এর উপর। আর কাকতালীয় ভাবে ATTITUDE শব্দের স্থানাঙ্কটাও হয় ১০০।

ছিবিটি লক্ষ্য করি, 


দুটি আপেল আমাদের সামনে রাখলে নিশ্চয়ই একটু দাগ যুক্ত আপেলটি আমরা নিব না। ১০০% ভাল জিনিসটাই আমরা নিজের জন্য বাছাই করি। তাহলে বুঝতেই পারতেছেন, জীবনে সফলতার জন্য পরিবার , সমাজ ও জাতীয় জীবনে আমরা এগিয়ে যাই, মানুষ আপনার খারাপ বিষয় গুলিকে অবশ্যই স্বাগত জানাবে না। ফলাফল হল আপনার জীবন ব্যার্থ হতে বাধ্য।

ATTITUDE  দুই প্রকারঃ

১। ইতিবাচক বা হাঁ বোধক বা POSITIVE  ATTITUDE 

২।নেতিবাচক বা নাবোধক বা NEGATIVE ATTITUDE

হার্ভার্ড ইউনিভর্সিটির অধ্যাপক উইলিয়াম জেমস বলেন, আমরা কেবল ATTITUDE পরিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের জাতিকে পরিবর্তন করে ফেলতে পারি।

এখানে তিনি POSITIVE  ATTITUDE  এর কথাই বলেছেন। কারন, 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম নায়ক  তৎকালীন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চর্চিল বলেন, 

The pessimist ( নেতিবাচক বা নৈরাশ্যবাদী ) sees difficulty in every opportunity.


 The optimist ( ইতিবাচক বা আশাবাদী ) sees opportunity in every difficulty.


নেতিবাচক বা নাবোধক বা NEGATIVE ATTITUDE এর মর্মান্তিক পরিনতিঃ

১। জীবন উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ে।

যেহেতু ব্যক্তিটি নেতিবাচক চিন্তার অধিকারী, তাই সে বিশ্বাস করে তার জীবনে কিছু হবে না। তার দ্বারা কিছু করা সম্ভব নয়। তার ভাগ্যই খারাপ - এ সমস্ত চিন্তা তাকে সর্বদা বিব্রত অবস্থায় ফেলে রাখে বিধায় তার জীবন নিয়ে কোন লক্ষ্য বা টার্গেট থাকে না। এজন্য তার জীবন উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ে।

২। অসুখী পারিবারিক জীবন তৈরী হয়।

স্বামী স্ত্রী দুইজনেই নেতিবাচক চিন্তার অধিকারী। সর্বদা একে অপরের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে। আস্তে আস্তে সংসার হয়ে ওঠে নরক সদৃশ্য। কেউ কারো ভালো জিনিস গুলো চর্চা করতে পারে না। এর প্রভাব তাদের সন্তান-সন্ততি থেকে শুরু করে পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে তাদের কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। এইভাবে পুরো জাতি হয়ে ওঠে  রোগাক্রান্ত। আন্ত ব্যক্তিক সম্পর্ক চরমবিদ্বেষপূর্ণ হয়ে ওঠে । যে কারণে আমরা দেখতে পাই বর্তমান সমাজ মানুষ কাউকে কেউ সহ্য করতে পারে না।

৩। তিক্ততা সম্পর্ককে শেষ করে দেয়।


নেতিবাচক চর্চার ফলাফলে এমন  তিক্ততা তৈরি হয় একজন আরেকজনকে কোন অবস্থায় আর সহ্য করতে পারে না । সমস্ত রিলেশন গুলো ধ্বংস হয়ে যায়।

৪। অস্বস্থিকর ব্যাক্তিত্ব তৈরী হয়।

নেতিবাচক চিন্তার মানুষগুলো তাদের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কেও উদাসীন থাকে। তাদের পোশাক - পরিচ্ছদ, চাল-চলন, ওঠা-বসা , কথাবার্তা সবগুলোর ব্যাপারেই তারা অসচেতন । যেন কোনরকম হলেই হবে।

 ধরুন একজন নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করে না। এই ব্যক্তিটি যখন আরেকজনের সাথে কথা বলে,  তখন দুর্গন্ধে ব্যক্তিটি পিছাইতে থাকে । কিন্তু এরা এ ব্যাপারেও এতই অসচেতন , সে আবার তার কাছাকাছি যায়। আসলে সত্যিকার অর্থে যদি আপনি অন্যের কাছে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে চান তাহলে আজি এ সমস্ত নোংরা নেতিবাচক বিষয়গুলো পরিহার করা উচিত।

৫। জীবন হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।


নেতিবাচক চিন্তার মানুষগুলো ভবিষ্যতে সবকিছুতেই ব্যর্থতা খুঁজে বেড়ায়। যে কারণে সে বড় কোন পরিকল্পনা নিয়ে সফলতার দিকে অগ্রসর হতে পারেনা। ফলে ব্যর্থতার গ্লানি সহ্য করতে না পেরে এক সময় সে হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়ে । তার জীবন হয়ে যায় বিষাদময়।

৬। হয়তো মাদকাসক্তও হয়ে পড়ে।


নেতিবাচক মানুষগুলো কখনোই সফল হতে পারেনা। একসময় তারা এমন হতাশায় নিমজ্জিত হয়,  তখন হয়তো তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। জীবনে ভালো কিছু অর্জন করার কোন আশাই আর অবশিষ্ট থাকেনা।

৭। জীবন পরিকল্পনা ও কর্মহীন হয়ে পড়ে। 



ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন ব্যক্তিটি নদীর পাড়ে বসে হাওয়া খাচ্ছে । অথচ তার এই জীবনে সঠিক কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ছিল।

 মুখে হাসি  প্রকৃত অর্থে এই হাসি চরম হটকারিতা ছাড়া আর কিছুই না।

আপনারা নিশ্চয়ই ঘাস ফড়িং এবং পিঁপড়ার গল্পটি শুনেছেন।

 গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড দাবদাহে পিঁপড়া সেই সকাল বেলা উঠে মাঠে কঠোর পরিশ্রম শুরু করে। সারাদিন তার কৃষি ক্ষেত্রে সে বীজ বপন করায় ব্যস্ত থাকে। মাঝে মাঝে পিঁপড়ার বন্ধু ফড়িং এর কাছে সে আসতো। ফড়িং নদীর পাড়ে চেয়ারে বসে গান করতো। আর পিঁপড়াকে ঠাট্টা করে বলতো এত সুন্দর দৃশ্য , এত সুন্দর হাওয়া বাদ দিয়ে তুমি বোকার মত সারাদিন মাঠে কাজ করছো। আমাকে দেখো আমি জীবনকে এনজয় করছি।

পিঁপড়া ফড়িং এর কথায় কান না দিয়ে, কঠোর পরিশ্রম করে শীতের রসদ যোগাড় করতেছিল । সামনে শীতকাল আসিতেছিল । ফসল বিক্রি করে সে তার বাড়িঘর নিরাপদ করেছিল । খাদ্যশস্য ঘরে মজুদ করেছিল । 

আর অন্যদিকে ফড়িং কোন কাজ করেনি । তার বাড়ি ঘর ছিল অনিরাপদ । ঘরে খাদ্য মজুদ ছিল না। যা হওয়ার তাই হল। খাদ্যাভাব ও প্রচন্ড শীতে ফড়িঙের স্ত্রী এবং সন্তানগুলো একে একে সব মৃত্যুবরণ করল।

 একদিন পিঁপড়া হঠাৎ শুনলো প্রধান ফটকে কে যেন দরজায় কড়া নাড়তেছিল। পিঁপড়া গিয়ে দেখে তার বন্ধু ফড়িং অর্ধমৃত । তাড়াতাড়ি সে তাকে ফায়ার হাউজে নিয়ে গেল। কিছু খাদ্যের ব্যবস্থা করল। কুশলাদি জানার পরে শুনলো খাদ্যভাব ও প্রচন্ড শীতে তার স্ত্রী এবং সন্তানেরা মৃত্যুবরণ করেছে । এখন ফড়িং বলতেছে,  ভাই আমাকে কিছু সাহায্য করা যাবে?  না হলে তো আমিও মৃত্যুবরণ করবো।

পিঁপড়া বললো ভাই আমার যা আছে আমি আমার স্ত্রী সন্তানদেরকে নিয়ে চলতে পারব। কিন্তু কাউকে সাহায্য করার মতো বাড়তি কোনো রসদ আমার কাছে নেই।

 আর জানো তো জিনিসপত্রের যা দাম বেড়েছে,  তাছাড়া বাচ্চাদের স্কুলের খরচ সবকিছু মিলিয়ে আমি নিজেই হিমশিম খাচ্ছি। তোমাকে সাহায্য করা সম্ভব নয়।

ফড়িং মনে কষ্ট নিয়ে সেদিনকার মত বিদায় হল। পরবর্তীতে সে বেঁচে ছিল কিনা তা আর জানা সম্ভব হয়নি।

প্রিয় পাঠক এই যে উদাসীন জীবনযাপন করে ফড়িং এর জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসলো , এটার একমাত্র কারণ হলো তার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।

তাহলে আমরা যদি খারাপ পরিনতি না চাই, আজ- এখন থেকেই   POSITIVE ATTITUDE  বা ইতিবাচক মনোভাব অর্জনে ব্রতী হওয়া শুরু করে দিতে হবে।

Post a Comment

0 Comments